বাসে অগ্নিসংযোগ : ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে ইবি প্রশাসনের সাথে বাস মালিকদের দর কষাকষি

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বাস-মালিকদের দর কষাকষি চলছে। দফায় দফায় তারা বৈঠকে বসলেও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কোনো পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না। আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ঠিক কি হবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বাসমালিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

জানা গেছে, বাসমালিক পক্ষ যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করছে তার পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতির চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এদিকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাস মালিকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনও পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর দু বাসের মাঝে পড়ে নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটু। এ ঘটনায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে বাস মালিকরা জানিয়েছেন, তারা ক্ষতিপূরণ না পেলে ক্যাম্পাসে গাড়ি সরবরাহ করবেন না।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, পরিবহন ব্যবস্থা সচল না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া সম্ভব নয়। জানা গেছে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে ঘটনার একদিন পর গত ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ কমিটি গঠন করে। ১৯ সদস্যের কমিটির মধ্যে ১০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, ৪ জন কুষ্টিয়া ও ঝিনইদহ শহরের বিআরটিএ প্রতিনিধি এবং বাকি ৫ জন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের বাস-ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন এ কমিটির আহ্বায়ক। জানা গেছে, ক্ষতি নিরুপণ কমিটির এ পর্যন্ত মোট তিনটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গাড়ির ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বাস মালিকদের এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী হবে এ নিয়ে কোনো পক্ষই সমঝোতায় আসতে পারছে না। ক্ষতি নিরুপণ কমিটির একজন সদস্য জানান, বিআরটিএ প্রতিনিধিরা প্রাথমিকভাবে যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন তার পরিমাণ প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন তার পরিমাণ প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা। উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে কারণে কোনো পক্ষই সমঝোতায় আসতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বরের বৈঠকে বাস মালিকপক্ষের নের্তৃবৃন্দরা বিআরটিএ প্রতিনিধি কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের ১০ শতাংশ ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এটা মেনে নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর ক্ষতি নিরুপণ কমিটি আবারও বৈঠক ডেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, বাসমালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সব কিছুই বাড়িয়ে বলছে। বাসের যে অংশটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়নি এবং তা মেরামত করে ব্যবহার করা সম্ভব বাস মালিক প্রতিনিধিরা সেটা সম্পূর্ণ নষ্ট বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আর এটার কারণেই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে ছাত্রদল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ আসনের যে গাড়িটিতে বোমা মেরে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো সেটি মেরামত করতে সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগেছে। সে হিসেবে ভাড়ায়চালিত ৪২ আসনের গাড়ি মেরামত করতে অনেক কম টাকর মধ্যে সম্ভব হবে। ৫৪ আসনের গাড়ির মেরামতের বিষয়টি মাথায় নিয়ে ৩৪টি গাড়ির ক্ষতিপূরণ ধরা হলেও সেটি দাড়ায় ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যেটি মালিক সমিতির দাবির অর্ধেকেরও কম। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহ করা বেসরকারি গাড়ির অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন ও ৪২ আসনের।

ক্ষতি নিরুপণ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন বলেন, ৩০ নভেম্বরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াকরা ৫টি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। দুটি বাসের শুধু কাঁচ ভেঙেছে। আর বাকি ২৮ বাসের আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছে তা আমার কাছে একটু কমই মনে হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএ প্রতিনিধিরা যেটা নির্ধারণ করেছেন সেটাও অনেক বেশি হয়ে যায়। তবে বিআরটিএ প্রতিনিধিরা উভয়পক্ষকে তাদের নির্ধারিত ক্ষতির পরিমাণের মাঝামাঝিতে আসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। উভয়পক্ষ প্রস্তাবটি মেলে নিলে সমঝোতার পথে কোনো বাধা থাকবে না।

পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ইচ্ছে থাকলেও আমরা বাস মালিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারছি না। কারণ তারা গাড়ি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক করা কষ্টকর হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকটা গাড়ি মালিকদের কাছে অসহায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বাস মালিকদের আলোচনার অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। আশা করি আগামী বৈঠকে আমরা উভয়পক্ষ একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবো।