বাবা-মা আটক : সন্দেহের তীর মায়ের দিকে

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে দু ভাইবোন ইশরাত জাহান অরণি ও আলভী আমানের হত্যার ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ তাদের পরিবারকে ঘিরে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি ঘটনার পর থেকে তার মায়ের কথাবার্তায় ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। এ কারণে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন মা জেসমিন আক্তার। ইতোমধ্যে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনের কললিস্ট যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া আল রাজী হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জেসমিনের সাথে অপরিচিত দু যুবককে দেখা গেছে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেসমিন আক্তারের সঙ্গে শিশু দুটির খালা আফরোজা মিলা ও বাবা আমানুল্লাহকে জামালপুর থেকে ঢাকা আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে বাসার গৃহ-শিক্ষিকাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেসমিন আক্তার ও আফরোজা মিলার কথাবার্তায় গরমিলের বিষয়টি নিশ্চিত হয় ৱ্যাব-পুলিশ।

এদিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় রামপুরা থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা না হলে পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবে। জানতে চাইলে ৱ্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, দু শিশু হত্যার বিষয়ে কিছু তথ্য জানার জন্য তাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে। আটক বা গ্রেফতার বলার কোনো সুযোগ নেই। জামালপুর থেকেই তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যেত কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ছায়া তদন্ত করছে ৱ্যাব-৩। তাদের কাছে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন মনে হওয়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের বাসাও ঢাকাতে। এমনিতেই তারা ঢাকায় আসতেন। তাদের ওপর কোনো সন্দেহ রয়েছে কি-না এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

জানা গেছে, সোমবার রাতে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করলেও মঙ্গলবার ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে এলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। লাশ গ্রহণের সময় বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিও অনেককেই ভাবিয়ে তোলে। এসব কারণে পুলিশের পাশাপাশি রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে ৱ্যাব। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দিনভর ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঘটনার সময় জেসমিন আক্তার বাসায় ছিলো বলে নিশ্চিত হয়। এছাড়াও রামপুরা থেকে উল্টোপথে ফার্মগেটের আল রাজি হাসপাতালে শিশু দুটিকে নিয়ে যাওয়াটাও রহস্যজনক। এসব ঘটনার কারণে জেসমিন আক্তার, আফরোজা মিলা ও শিশু দুটির বাবা ওবায়দুল্লাহকে জামালপুর থেকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে জেসমিন আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়। সেখানে বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অস্বাভাবিক আউটগোয়িং ও ইনকামিং কলের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আল রাজী হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকেও জেসমিন আক্তারের সঙ্গে অপরিচিত দুই যুবককে দেখা যায়। তারা এই পরিবারের সদস্য নয় বলে তদন্ত সূত্র নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় শিশু দুটিকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে খালা আফরোজা মিলার সাথে তারাও সহযোগিতা করেছে। এসব তথ্য প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরপরই রাতে ৱ্যাব-১৪কে জানানো হয়। তারা রাতেই জামালপুরের ওই বাসার আসপাশে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি গভীর রাতে ঢাকা থেকে ৱ্যাব-৩-এর সদস্যরা জামালপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখান থেকে দুপুরে ৱ্যাব সদস্যরা জেসমিন আক্তারের সঙ্গে শিশু দুটির খালা আফরোজা মিলা ও বাবা আমানুল্লাহকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে রাতে ৱ্যাব-৩-এর কার্যালয়ে পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে তাদের গাড়িতেই ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তারা আগের (খাদ্যে বিষক্রিয়া) অবস্থানেই রয়েছেন।

ৱ্যাবের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হত্যাকা- বাসায় ঘটেছে সে বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। এবং হত্যাকাণ্ডের সময় জেসমিন আক্তার বাসায় ছিলেন বলে অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এ কারণে সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই মা জেসমিন। তিনিই বলতে পারবেন কী ঘটেছিলো এবং কারা এ ঘটনার সাথে যুক্ত। এ ঘটনার সাথে পরিবারের অন্য সদস্যরা জড়িত কিনা তাও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেসমিন-আমানুল্লাহ দম্পতি সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাইবোন হলেও তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিলো বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। এমন পরিস্থিতিতে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তা এখন দেখার বিষয়।

এদিকে রাজধানীর বনশ্রীতে দুই ভাইবোনের মৃত্যুর ঘটনায় ১৩টি আলামতের ডিএনএ ও রাসায়নিক পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। বুধবার রামপুরা থানার উপপরিদর্শক সোমেন কুমার বড়ুয়া অনুমতি চেয়ে এ আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ১১টি আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা এবং দুটি আদালতের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যে আলামত সেগুলো হলো- বিছানার চাদর, বালিশের চারটি কাভার (শাদা-কালো-লাল স্ট্রাইপ), একটি কম্বল, পুরনো কামিজ, সাদা টিস্যু, খাবারের দাগ লাগানো সংবাদপত্রের পাতা, সাদা কাপড়ের টুকরো ও একটি জর্জেট ওড়না।
রাসায়নিক পরীক্ষার আলামত দুটি হলো- চায়নিজ খাবারের অবশিষ্টাংশ ও বোতলে থাকা পানি।