বাপ-দাদার ভিটেমাটি দেখতে আলমডাঙ্গায় এসে লালনগীতির প্রেমে পড়েছেন ভারতের শিলিগুড়ির নর্থ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও তার ব্যবসায়ী বন্ধু

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বাপ-দাদার ভিটেমাটি দেখতে এসে বাউল স¤্রাট লালনের গানের প্রেমে পড়ে গেছেন ভারতের শিলিগুড়ির নর্থ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ক্ষুদিরাম বর্মণ ও শিলিগুড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজা মজুমদার। গতকাল সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীতে উপস্থিত হয়ে লালনগীতির প্রতি তাদের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, ভারতের শিলিগুড়ির নর্থ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ক্ষুদিরাম বর্মণ (৪৪) ও শিলিগুড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজা মজুমদার (৪৩) গত ২ দিন পূর্বে বাংলাদেশে বাপ-দাদার ভিটেমাটি দেখতে এসেছেন। এক সময় তাদের বাপ-দাদার ভিটে ছিলো আলমডাঙ্গা উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামে। পোলতাডাঙ্গা গ্রামের এক পাশ দিয়ে বহমান মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে ছিলো বাড়ি। ৪৭’ সালে দেশভাগের সময় তাদের বাপ-দাদারা ভারতে পাড়ি জমান। ভারতের শিলিগুড়ি শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারা। সেখানে তাদের উত্তর প্রজন্মের বসবাস। বাপ-দাদার আদিভিটে-মাটির প্রতি প্রবল অনুরাগবশত বর্তমান প্রজন্মের ২ প্রতিনিধি শিলিগুড়ির নর্থ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ক্ষুদিরাম বর্মণ ও শিলিগুড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজা মজুমদার বাংলাদেশে ছুটে সেন। এ প্রসঙ্গে রাজা মজুমদার বলেন, ঠাকুরদা ও বাবার মুখ থেকে তাদের আদি ভিটে-মাটির অনেক আবেগময় গল্প শুনেছি। তখন থেকেই বাংলাদেশের পোলতাডাঙ্গা গ্রামে বেড়াতে আসার ভীষণ ইচ্ছে হতো। আকৈশর সেই বাসনা লালন করেছি। বাংলাদেশে চরমপন্থীদের আধিপত্যের কথা জেনে আত্মীয়স্বজন আসতে দিতে চাইতো না। তবে বেশ কিছুদিন আগে থেকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সাংবাদিক এখলাছ উদ্দীনের সাথে ফেসবুকে পরিচয়। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে এবার চলে এসেছি।
গতকাল দুপুর পর তারা দু’জন দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার বাড়াদী প্রতিনিধি সাংবাদিক এখলাছ উদ্দীনের সাথে আলমডাঙ্গায় আসেন। দেখা করেন স্থায়ীয় সাংবাদিকদের সাথে। আলমডাঙ্গা শহরে তারা পোলতাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক বাড়াদী ইউপির চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনিসহ কয়েকজনের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন।
এরপর সন্ধ্যায় ছুটে যান লালনের গান শুনতে মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীতে। তাদের সম্মানে লালনের গান পরিবেশন করেন মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি আশরাফুল হক লুলু, সহসভাপতি মাহফুজুল হক তুষার, সুশীল কুমার কর্মকার, তবিবুর রহমান মাস্টার, কমলকান্তি চক্রবর্তী, আশরাফুল হক পান্না মাস্টার, আতিক বিশ্বাস, স্বপন, তাজুল ইসলাম, আব্দুল মোমিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাসদ সভাপতি গোলাম সারোয়ার, গল্পকার আনোয়ার রশীদ ও সাংবাদিক রহমান মুকুল।
এ সময় নর্থ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ক্ষুদিরাম বর্মণ বলেন, বাউল সঙ্গীতের প্রতি আমাদের দুর্বলতা থাকলেও শিলিগুড়িতে বাউলগানের প্রচলন নেই বললেই চলে। সেখানে ওয়েস্টার্ন সঙ্গীতের আধিপত্য। আলমডাঙ্গায় এসে সুযোগ হলো লালনের গান শোনার। আমরা তো লালনের গানের রীতিমত প্রেমে পড়ে গেছি। তিনি আলমডাঙ্গার সাংবাদিকদের ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।