বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন দাবি

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য সেনা সদস্য মোতায়েন চেয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। দেশে বর্তমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং কেন্দ্রটির গুরুত্ব বিবেচনায় বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ অনুরোধ করা হয়েছে।

গত মার্চে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনে নাশকতা চালানোর হুমকি দিয়েছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) একটি অংশ। ওই হুমকির পর এবং গত ১ জুলাই গুলশান হামলার পর বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ইতোমধ্যে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে।

এরই মধ্যে গত ১ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন কেন্দ্রে (বিআইপিটিসি) সেনা সদস্য মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, কেন্দ্রটির মাধ্যমে ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজের জন্য প্রতিদিনি কয়েকশ’ বাইরের লোক কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করে। কেন্দ্রটিতে অনেক বিদেশি প্রকৌশলীও কর্মরত রয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রয়োজন।

চিঠিতে আরো বলা হয়, কেন্দ্রটি কেপিআই (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ১ (ক) শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত। এর নিরাপত্তার জন্য ৪০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। তাদের দ্বারা কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান কষ্টসাধ্য হচ্ছে। তাই এর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য সেনা সদস্য মোতায়েন করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আলবেরুনী বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে সেনা সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি আমরা পাইনি। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতটুকু সম্ভব নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা চলছে।

বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, গতকাল রোববার সচিবালয়ে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ওই বৈঠকেও অন্যান্য বিষয়ের সাথে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি ও নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। তিনি জানান, পিজিসিবির প্রস্তাবটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে জ্বালানি বিভাগ। সেনা মোতায়েনের জন্য শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

২০১৩ সালের অক্টোবরে দেশে প্রথমবারের মতো বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। ওই সময় হতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রামকৃষ্ণপুরে অবস্থিত কেন্দ্রটির মাধ্যমে ভারতের বহরমপুর থেকে দৈনিক ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। কেন্দ্রটির সক্ষমতা বাড়িয়ে ভারত থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর বাইরে গত মার্চ হতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালটানা থেকে কুমিল্লা গ্রিড উপকেন্দ্রে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। ওই উপকেন্দ্রের মাধ্যমে আরো অন্তত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে রফতানির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার।