বরিশালে লঞ্চডুবি ১৪ লাশ উদ্ধার : নিখোঁজ ২৫

 

স্টাফ রিপোর্টার: বরিশালের বানাড়ীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের দাসেরহাট মজিদবাড়ী লঞ্চ ঘাট এলাকায় লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে।

ডুবে যাওয়া লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় বানাড়ীপাড়া লঞ্চঘাট থেকে ‘এমএল ঐশী’ নামে ওই লঞ্চটি ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা উজিরপুরের হাবিবপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এটি সন্ধ্যা নদীর ভাঙনকবলিত দাসেরহাট মজিদবাড়ী ঘাটে ভিড়ে। যাত্রী ওঠা-নামার এক পর্যায়ে নদী তীরের একটি বিরাট অংশ ভেঙে লঞ্চের ওপর পড়লে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একদিকে কাত হয়ে তীব্র স্রোতের কারণে তলিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তীব্র স্রোতের পাশাপাশি পানির গভীরতা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট ছিলো। ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তে লঞ্চ থেকে তীরে ওঠা যাত্রী উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়াকান্দী গ্রামের বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, ঘাটে ভেড়ার পর মাত্র ৭/৮ জন যাত্রী তীরে উঠতে পেরেছে। এর পরপরই লঞ্চটি ডুবে যায়। ঘটনার পরপরই সেখানে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে বিআইডবিস্নউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চের নির্খোজ যাত্রীদের মধ্যে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিআউডবিস্নউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের দেয়া তথ্যানুযায়ী এরা হলেন, বানারীপাড়ার মজিবর রহমানের স্ত্রী কোহিনূর বেগম (৪০), মজিদ মাস্টারের স্ত্রী সালেহা বেগম (৬০), উজিরপুরের কেশবকাঠি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা আ. রাজ্জাক (৭৫), বানারীপাড়ার সাঈদ আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫), মৃত চান্দু মিঞার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪৫), মৃত ইসমাইল মোল্লার ছেলে মুজাম্মেল মোল্লা (৬২), রহিম হাওলাদারের স্ত্রী রেহানা বেগম (৩৫), উজিরপুরের মনিন্দ্রনাথ মলি্লকের ছেলে সুখদেব মলি্লক (৩৫), বানারীপাড়ার আবুল ঘরামীর ছেলে মিলন ঘরামী (৩২), মো. সাগর মীর (১৫), উজিরপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জয়নাল হাওলাদার (৫৫), বানারীপাড়ার আ. মজিদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৫৫), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের শিশু মেয়ে শান্তা (৭) এবং স্বরূপকাঠির কামাল হোসেনের স্ত্রী হীরা বেগম। ঘটনাস্থলে কর্মরত বিআইডবিস্নউটিএ এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী নিখোঁজ রয়েছে লঞ্চের আরো অন্তত ১৩ জন যাত্রী। এরা হলেন- লাশ উদ্ধার হওয়া মিলন ঘরামীর স্ত্রী খুকুমণি (২৫) ও তাদের সন্তান সাফওয়ান (৩), উজিরপুরের খলিল হাওলাদারের স্ত্রী হামিদা বেগম (৪০) ও তার ছেলে নাফফি (৯), লাশ উদ্ধার হওয়া রেহানা বেগমের ছেলে রিয়াদ হাওলাদার (৫), বানারীপাড়ার আ. মজিদ হাওলাদার (৪৫), হামেদ হাওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদার (৪০), উজিরপুরের মনিশংকরের স্ত্রী আল্পনা রানী (২৫), বানারীপাড়ার মালেক সরদারের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), উজিরপুরের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাফি (৭), এবং বানারীপাড়ার আলমগীর হোসেনের শিশু মেয়ে মারিয়া বেগম (৩)। বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, ‘দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনকে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারিভাবে নিহতদের পরিবার প্রতি ১০ হাজার করে টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে।’