বজ্রগর্ভ মেঘে প্রবল বর্ষণ ॥ কালবোশেখির ছোবলে ব্যাপক ক্ষতি

গ্রীষ্মের দাবদাহের পূর্বাভাসকে এক ধাক্কায় ভুয়া বানিয়ে ভর করেছে বর্ষার আমেজ

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রীষ্মের দাবদাহের পূর্বাভাসকে এক ধাক্কায় ভুয়া বানিয়ে ভর করেছে বর্ষার আমেজ। শুধু বৃষ্টি নয়, বজ্রসহ বৃষ্টি আর কলবোশেখির ভয়াল থাবায় চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দেশের অধিকাংশ এলাকাই এবার বেসামাল অবস্থা। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রাঙ্গামাটিতে ১১৮ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৯টার ঝড়সহ বৃষ্টি হয়েছে ৫৬ মিলিলিটার। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার আসমানখালীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ঝিনাইদহের মহেশপুরেও কালবোশেখির থাবায় বহু ঘর বাড়ি গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। মেঘ হতে না হতে আকাশ কালো করে অঝরে যেমন ঝরাচ্ছে বৃষ্টি, তেমনই বজ্রপাতের ঝলসানো আলো আর বিকট শব্দ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে জনপদের মানুষ। গতপরশু সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গায় ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা বহুলাংশে ভেঙে পড়ে। ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গতকাল সকাল থেকেই হিমশিম খেতে হয়। অবশ্য সকাল হতে না হতে চুয়াডাঙ্গার আকাশে নেমে আসে অন্ধকার। সকালেই যেন সন্ধ্যার আমেজ ফুটে ওঠে। ৯টার দিকে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। ওঠে ঝড়। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বহু গাছ ভেঙে পড়ে। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কেও গাছ ভেঙে পড়লে চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। চুয়াডাঙ্গা হাজরাহাটি ফিডারের বহুগ্রাহককে গতপরশু রাত থেকে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় থাকতে হয়েছে। গতকাল আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার আবহাওয়া অফিসের এক বুলেটিনে জানানো হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপকূলবর্তী এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে উপকূলে অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার আসমানখালী খোরদ গৌরীহ্রদসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কালবোশেখি ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বহু টিনের বাড়ির চাল উড়িয়ে নিয়েছে। ফেলে বহু দূরে। ভাংবাড়িয়া মাধ্যামিক বিদ্যালয়ে নিম ও আম গাছে বর্জ্রপাতে ক্ষতি হলেও প্রাণহানি হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষীকা ও ছাত্র-ছাত্রী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একই সময়ে গৌরীহ্রদ গ্রামের মৃত খবির মোল্লার ছেলে  মারফত আলী মোল্লার বসতবাড়ি ঘরের উপরে একটি রেইনট্রি গাছের  ডাল ভেঙে পড়ে এতে ব্যাপক ক্ষতক্ষতি হয়। খোরদ গ্রামে মৃত মসলেম বিশ্বাসের ছেলে হাসিবুল ইসলাম বিশ্বাসের রাইস মিলের ছাউনি কালবোশেখি ঝড়ে উড়িয়ে দেয়। এতে হাসিবুল ইসলাম জানান, তার এই ঝড়ে ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খোরদ থেকে ফিরে এসে, আসমানখালী শালিকা গ্রামে আব্দুল মালকের প্রতিবন্ধী ছেলে হাফিজুর রহমানের বসতবাড়ি ঘর ঝড়ে ভেঙে পড়েছে এবং উপজেলার বিভন্ন এলাকায় আম, কাঠাল, লিচ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন বাগিছা ভেঙে পড়েছে এতে চষিরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রোবববার সন্ধ্যায় হঠাৎ কালবোশেখি ঝড়ে স্কুলসহ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ও বৈদ্যুতিক পোল ভাঙচুরের কারণে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুতবিহীন ছিলো। গত কয়েকদিন ধরে মহেশপুরসহ এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। এলাকার বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা, বিদ্যুত লাইন মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়। এদিকে মহেশপুর ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুননেছা জানান, বাগানমাঠ এলাকার একটি স্কুলের টিনের চাল উড়ে গেছে। রামচন্দ্রপুর গ্রামের কিছু ঘরবাড়ী উড়ে গেছে, সস্তার বাজারের গাছ ভেঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মহেশপুর-খালিশপুর রোডে গাছপালা ভাংচুর হয়েছে। এছাড়া উঠতি বোরো ধান নিয়ে চাষীরা পড়েছে মহা-বিপাকে। মহেশপুর কৃষি অফিসার আবু তালহা জানান প্রাকৃতিক দূর্যোগে চাষীরা বিপাকে পড়েছেন।