ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা : চরম দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার: দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যানজট পরিস্থিতি শনিবার আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে যানবাহনগুলোকে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে ঈদের ছুটি শেষে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্বিম থেকে ঢাকামুখী মানুষ বাসে আটকে থেকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘাটে ফেরিস্বল্পতা, ভাঙনের কারণে ঘাট সমস্যা ও একসাথে অনেক যানবাহন আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকেলে গোয়ালন্দ অংশে যানবাহনের সারি ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ছোট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং গোয়ালন্দ মোড় থেকে বসন্তপুর নিমতলা পর্যন্ত আরও ২ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়ায় ঘাট এলাকায় গাড়ির সারি আট কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। এ অবস্থায় যাত্রী ও যানবাহন চালকদের বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফেরির জন্য আটকে পড়া যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন। দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে থাকার পর বহু যাত্রীকে বাস ছেড়ে দিয়ে হেঁটে ঘাটের দিকে রওনা দিতে দেখা যায়। আবার পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় বাস সংকটের জন্য যাত্রীদের ৮-১০ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে।

ঘাট সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে চারটি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়ার চারটি ফেরিঘাটের মধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দুটি। শুক্রবার বিকেলে নদীভাঙনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ৪ নম্বর ফেরিঘাট। রাত ১০টার দিকে ঘাটটি সংস্কার করে চালু করা হয়। এ ঘাটের মূল পাকা সড়কের অধিকাংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শুধু ছোট যানবাহনগুলো পারাপার হতে থাকলেও শনিবার দুপুর ২টার দিকে ফের ভাঙনে ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ২নং ঘাটটি ঈদের আগে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বিলীন হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। তীব্র স্রোতের কারণে সেখানে কাজ করা যাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কে তীব্র যানজট থাকায় যাত্রীরা ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলারে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে জমিদার ব্রিজ ও পদ্মার মোড় দিয়ে গোয়ালন্দ বাজার আড়তপট্টি ও চর দৌলতদিয়ার বিকল্প সড়কে ঘাটে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত সরু ও  জরাজীর্ণ হওয়ায় ওই সড়কেও প্রায় সারাদিন যানজট লেগে ছিলো। এদিকে ঈদের আগে ও পরে মোট ছয় দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার চালু হয়েছে; কিন্তু যানবাহনের চাপ কমাতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে গোয়ালন্দ মোড়ে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। সেখানেও শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. শাহ নেওয়াজ জানান, ঘাটের বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রী ও চালকদের বিকল্প রুট ব্যবহার করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার (মেরিন) আবদুস সাত্তার জানান, রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান তীব্র স্রোতের কারণে চলতে পারছে না। সংস্কারের জন্য রো রো ফেরি শাহজালালকে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ হাতে না পাওয়ায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে ফেরি মাধবীলতা। এদিকে কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়ায় যানজট ছাড়াও স্পিডবোটে অতিরিক্ত ভাড়া ও লঞ্চে বেশি যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ উঠেছে। বৈরী আবহাওয়া ও প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে লঞ্চের ধারণক্ষমতার চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ যাত্রী বেশী নিয়ে পদ্মা পারাপার হতে দেখা গেছে। বিআইডব্লিউটিএসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে কর্মস্থলমুখী যাত্রীর ভিড় শুরু হয়। অনেকদিন ধরে নাব্য সংকটের কারণে নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ধারণক্ষমতার কম যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এ কারণে শনিবার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে হাজি শরীয়তউল্লাহ সেতু পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিআইডব্লিউটিসির কাওড়াকান্দি ঘাট ইনচার্জ আবদুস সালাম মিয়া জানান, শনিবার ভোর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা শত শত যানবাহনের চাপে ঘাট এলাকায় যানজট অসহনীয় হয়ে উঠছে। মাদারীপুর পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ শেষে যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারে, সেজন্য ঘাট এলাকায় পুলিশ, ৱ্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়ন রয়েছে।
অন্যদিকে পাটুরিয়া ঘাটে পরিবহন স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘাটে যাত্রীদের বাসের জন্য ৮-৯ ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতে হয়েছে। পাটুরিয়া থেকে নবীনগরের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৫৫ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ২শ টাকা। পাটুরিয়া থেকে সাভারের ভাড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ২শ থেকে ২৫০ টাকা। পাটুরিয়া ও আরিচা থেকে গাবতলীর ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা; কিন্তু এখন নেয়া হচ্ছে ২শ থেকে ২৫০ টাকা।