ফরহাদ মজহার বারডেমে ভর্তি

 

স্টাফ রিপোর্টার: অপহরণের শিকার কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে আদালতের আদেশে মুক্তি দেয়ার পর সরাসরি রাজধানীর শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম) ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার ও মেয়ে সম্তলী হক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আদালত থেকে ফরহাদ মজহারকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস এবং হৃদরোগে ভুগছিলেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় গত দুই দিনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মানসিকভাবে ও তিনি ভীষণ বিপর্যস্ত। ফরহাদ মজহার সুস্থ ও স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত ডাক্তারগণ তাকে নিবিড় পরিচর্যায় থাকতে বলেছেন এবং কথা বলতে নিষেধ করেছেন বলে জানান তারা। তিনি সুস্থ হলে পরবর্তীতে মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলবেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। ফরিদা আখতার ও সম্তলী হক দেশ, জাতি ও গণমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহারের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

এদিকে বারডেমে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক ফরহাদ মজহারকে হাসপাতালে ভর্তির খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ডায়েবেটিসসহ মাল্টিপল সমস্যা নিয়ে ফরহাদ মজহারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের একজন অধ্যাপকের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে কবিকে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছ। এসবের রিপোর্ট পেলে তার শারীরিক অবস্থা জানা যাবে। তাকে একটি কেবিনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ফরহাদ মজহারকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আহসান হাবিব। এরপর তাকে নিয়ে আদালত থেকে রওনা দেন স্ত্রী ফরিদা আখতার ও মেয়ে সম্তলী হক। সন্ধ্যা নাগাদ তারা শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে পৌঁছান। এরপর তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

উল্লেখ্য, সোমবার ভোর ৫টার পর রাজধানীর শ্যামলীর নিজ বাসা থেকে বের হবার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। এর ১৯ ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে যশোরেরে নওয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের সামনে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে র‌্যাব। বাসটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। পরে তাকে স্থানীয় অভয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাতেই কড়া প্রহরায় তাকে পার্শ্ববর্তী ফুলতলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় যশোর থেকে ফরহাদ মজহারকে প্রথমে ঢাকার আদাবর থানায় নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে ডিবি কর্মকর্তাদের কাছে নিজের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনার বিবরণ জানান ফরহাদ মজহার। পরে দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন ফরহাদ মজহারের বরাতে তাকে অপহরণের কথা জানান।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার আমাদের জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে তিনি রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের ১ নম্বর বাসা থেকে বের হন। এর পরপরই বাড়ির সামনে থেকে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে চোখ বেঁধে একটি শাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে যশোরের নোয়াপাড়া এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে ফরহাদ মজহারকে আদালতে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। সেখানে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে নিজ জিম্মায় মুক্তির অনুমতি দেন আদালত।