প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সরগরম এখন পাড়া মহল্লা।

 

আলুকদিয়া থেকে ফিরে আলম আশরাফ: চুয়াডাঙ্গায় দ্বিতীয় ধাপে ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চারটি ইউনিয়ন হলো আলুকদিয়া, মোমিনপুর, পদ্মবিলা ও কুতুবপুর। এর মধ্যে আজ আলুকদিয়া ইউপি নির্বাচন নিয়ে এই প্রতিবেদন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়ন এলাকার আলুকদিয়া, আকন্দবাড়িয়া, ঝোড়াঘাটা, হুচুকপাড়া, মনিরামপুর রাজাপুর, পিতম্বরপুর, পীরপুর, হাতিকাটা ও দৌলাতদিয়াড় নিয়ে এর অবস্থান। মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৯০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৩৬৭ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৫৩৭ জন। এবারের ইউপি নির্বাচনে ১১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রগুলো হলো আলুকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি কেন্দ্র, পিতম্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে দুটি কেন্দ্র, দৌলাতদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দৌলাতদিয়াড় শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আসন্ন নির্বাচনে এবার এ ইউনিয়নে ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী লড়াই করছেন। দেশে এই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচনের আমেজ অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন দৌলাতদিয়াড়ের আতিয়ার রহমানের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুল। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার শিক্ষকতা যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিগত পাঁচ বছর আমি এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন করেছি। মানুষের কল্যাণে দিন নেই রাত নেই পরিশ্রম করেছি। তাই আমি আশাবাদী এবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি জয়ী হবো। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. আবদুল মজিদ মোল্লা সাবেক চেয়ারম্যান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মনিরামপুর গ্রামের মৃত ফয়জদ্দীন মোল্লার ছেলে অ্যাড. আব্দুল মজিদ মোল্লা। তিনি এলএলবি পাস। সমাজসেবার পাশাপাশি আইন ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি ১৯৯৮ সালে আলুকদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই সুবাদে তার সুনাম ও জনপ্রিয়তা আছে। পরবর্তীতে বিএনপির একটি পক্ষ তাকে হারিয়ে দেয় বলে তার অভিযোগ। তিনি বলেন এবার দলের একক প্রার্থী হিসেবে আমি শতভাগ বিজয়ী হওয়ার আশা রাখি। জাতীয়পার্টি মনোনীত প্রার্থী লাঙল প্রতীক নিয়ে দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার আজের আলী মণ্ডলের ছেলে জুলফিকার আলী কলি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কয়েকবার কলির সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য প্রকাশ করা গেল না। দৌলাতদিয়াড়ের আসাদুজ্জামানের ছেলে আলিমুজ্জামান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী। তিনি জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আলিমুজ্জামান। ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলুকদিয়া গ্রামের মৃত আখের আলীর ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দীন আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাই ইসলাম উদ্দিন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।

এছাড়াও সাধারণ মেম্বার পদে ১ নং ওয়ার্ডে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন আশরাফুল হক ভুট্টো, আবদুস সালাম, মিজানুর রহমান, আল বেলাল ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ২ নং ওয়ার্ডে আবদুর রশীদ, সহিদুল ইসলাম ও আবুল হাশেম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩ নং ওয়ার্ডে ৪  জন লড়ছেন। এরা হলেন জিয়াউল হক, আবুল হোসেন, আবদুর রাজ্জাক ও সিরাজুল ইসলাম। ৪ নং ওয়ার্ডে ৩ জন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এরা হলেন শফিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ ও মোশারেফ হোসেন। ৫ নং ওয়ার্ডে আশরাফ আলী, আবদুল হালিম, রাফিজ উদ্দিন ও শান্তি মিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬ নং ওয়ার্ডে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন শাহিন উদ্দিন ও বিপুল হোসেন। ৭ নং ওয়ার্ডে গোলজার হোসেন, মনোয়ার মোল্লা, ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও কাউছার হোসেন মেম্বার পদে লড়ছেন। ৮ নং ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা হলেন লিটন হোসেন, রবিউল ইসলাম, বকুল হোসেন, হাবলুর রহমান, মোক্তার আলী, মুনতাজুর রহমান ও রেজাউল ইসলাম এরশাদ। ৯ নং ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। এরা হলেন ডাবলু মিয়া, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শরিফুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার সর্দার, হাসান আলী ও কামরুজ্জামান শিশির। সংরক্ষিত তিনটি আসনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  ১ নং ওয়ার্ডে সুরাতন নেছা, মুনজুয়ারা বেগম, আছিয়া খাতুন, ২ নং ওয়ার্ডে নাজমা খাতুন, আনোয়ারা খাতুন, পারুলা খাতুন, এবং ৩ নং ওয়ার্ডে মনোয়ারা সুলতানা ও রওশন আরা খাতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ দিকে ভোটাররা বলছেন, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যারা এলাকার উন্নয়ন করবেন তাদেরকেই বেছে নিতে চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ। মেম্বার, সংরক্ষিত প্রার্থী ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সরগরম এখন পাড়া-মহল্লা। প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটাররা বলছেন, দলীয় প্রতীক থাকলেও দক্ষ এবং যোগ্য প্রার্থীকেই তারা নির্বাচিত করতে চান। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারাও। ইউনিয়নজুড়ে সর্বত্রই এখন বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।