পুলিশ ও সাংবাদিকের সহায়তায় কালীগঞ্জ থেকে ৩ শিশু ফিরে গেলো মায়ের কোলে

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: জনতা, সাংবাদিক ও পুলিশের সহায়তার অবশেষে ৩ শিশু সন্তানকে তাদের বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজ থানা হেফাজতে থাকা শিশু ৩টির বাবা-মাকে ডেকে এনে তাদের বুকে সন্তানদের তুলে দিয়েছেন। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় কালীগঞ্জ বাসটার্মিনাল থেকে জনতা শিশু তিন পাচার হচ্ছে ভেবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় ৩ শিশুকে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলো। এরা হলো- কোটচাঁদপুরের ইসলামিয়া কওমি মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাকিব হোসেন (১১) ও কামিল মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফরহাদ হোসেন (১১) এবং যশোর বাঘারপাড়া উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে রাকিব (১৪)। কালীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতা মেন বাস টার্মিনাল থেকে পাচার হচ্ছে ভেবে ৩ শিশুকে আটকে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর পেয়েই শহরের অন্যান্য সাংবাদিকগণও সেখানে হাজির হন।

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে শিশুরা জানান, শিশু ফরহাদের পিতা কোটচাঁদপুর দুধসরা গ্রামের আকতার হোসেন ও একই গ্রামের শিশু সাকিবের পিতা শাহ আলম বিদেশে চাকরি করেন। গত রোববার সকালে ফরহাদের মা তাকে বকুনি দেয়ায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। এরপর ফরহাদ তার চাচাতো ভাই সাকিবকে নিয়ে কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে যায়। সেখানেই পরিচয় হয় আরেক শিশু বাঘারপাড়া বাগডাঙ্গা গ্রামের রাকিবের সাথে। রাকিবও তার পিতার বকুনি খেয়ে বাড়ি ছেড়ে রাগ করে ঢাকায় মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ট্রেনে চেপে কোটচাঁদপুর স্টেশনে এসে নেমে পড়েছিলো। পরিচয় গল্পে আর আলাপে সখ্য গড়ে ওঠে শিশু তিনটির মধ্যে। তারা পরিকল্পনা আটে বাড়িতে ফিরবে না ঢাকায় গিয়ে কাজ করে খাবে। সেই মতেই ট্রেনে চেপে চলে আসে কালীগঞ্জে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালীগঞ্জ বাস টার্মিনালে বসে থাকা শিশু তিনটির মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ফরহাদ ও সাকিব বাড়ি ফেরার জন্য কাঁদতে থাকে। এদের মধ্যে বড় শিশু রাকিব ছোট দুজনকে আটকে রাখতে চেষ্টা করাকালে বিষয়টি স্থানীয় জনতার নজরে পড়ে।

জনতা এগিয়ে এসে শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তায় গরমিল পেয়ে শিশুপাচার হতে পারে সন্দেহ জাগে। এমন ভেবেই জনতা স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তা নেয়ার জন্য শিশুদেরকে একটি দৈনিক পত্রিকা অফিসে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকগণ ও জনতা জিজ্ঞাসাবাদে বড় শিশুটিকে পাচারকারী চক্রের সদস্য হতে পারে বলে ধারণা করেন। পরে তারা বিষয়টি জানিয়ে থানা পুলিশে খবর দিলে থানার এসআই মাহফুজ ঘটনাস্থলে এসে শিশু তিনটিকে থানায় নেন। তিনি রাতেই অনেক যোগাযোগ চালিয়ে শিশু তিনটির পরিবারের অভিভাবকদের পরিচয় মেলাতে সক্ষম হন। পরদিন ওই তিন শিশুর বাবা-মায়েরা কালীগঞ্জ থানায় যাওয়ার পর সন্তানদের তাদের বুকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এসআই মাহফুজ জানান, শিশু ও তার পিতা-মাতারা পুলিশকে বলেছেন, বকুনি খেয়ে ৩ শিশুই বাড়ি থেকে পালিয়ে বের হয়েছিলো। জনতা ও সাংবাদিকের সহায়তায় আজ তারা বাবা-মার কোলে ফিরে গেলো। অন্যথায় কোনো পাচারচক্রের কবলে পড়তো।