পার্লামেন্ট ও খোমেনির মাজারে হামলা : ১২ জন নিহত

জোড়া জঙ্গি হামলায় আক্রান্ত তেহরান : আইএস’র দায় স্বীকার

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: এবার ইসলামী বিপ্লবের দেশেই হানা দিল ইসলামিক স্টেট বা আইএস। আক্রান্ত ইরান। জোড়া সন্ত্রাসবাদী হানায় কেঁপে উঠলো শিয়াপ্রধান দেশটির রাজধানী তেহরান। প্রথম হামলাটি হয়েছে ইরানের পার্লামেন্টে। অন্তত তিনজন সশস্ত্র জঙ্গি পার্লামেন্টে ঢুকে বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে বলে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। এই হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে হামলা হয়েছে। এক জঙ্গি সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। জঙ্গিরা সেখানে গোলাগুলিও চালিয়েছে বলে খবর। তবে পার্লামেন্টের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। জঙ্গিরা সেখানে অনেককে পণবন্দি বানানোর চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। আলি জাফরজাদেশ নামে এক এমপি সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সিকে (আইআরএনএ) জানিয়েছেন, তিনি তিন জঙ্গিকে পার্লামেন্টে হামলা চালাতে দেখেছেন। দুজনের হাতে ছিলো কালশনিকভ। একজনের হাতে কোল্ট পিস্তল ছিল। জঙ্গিদের বেপরোয়া গুলিতে অনেকে জখম হয়েছেন। পার্লামেন্ট হানায় ইতোমধ্যেই ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারেও অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে
বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে।

মধ্যএশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ গত কয়েক বছর ধরেই একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার। ইরাক, সিরিয়া নিরন্তর যুদ্ধে বিধ্বস্ত। নাশকতায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, লিবিয়া, মিসরের মতো দেশও। কিন্তু শিয়াপ্রধান দেশ ইরানকে সম্প্রতি অতীতে খুব বড় সন্ত্রাসী হানার শিকার হতে হয়নি। এবার জঙ্গিরা বুঝিয়ে দিলো, তেহরানও আর নিরাপদ নয়। গত শতাব্দীর গোড়ায় তুরস্কের মতোই মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন ইসলামী দেশ উদারনীতির পথে হাঁটতে শুরু করেছিলো গোঁড়ামি ছেড়ে। কিন্তু ইসলামী দুনিয়ার ইতিহাস তারপর আবার একটা বাঁক নেয় ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর। ইরানে সেই ইসলামী বিপ্লবের প্রধান ছিলেন রুহোল্লা খোমেনি, যিনি বিশ্বে বেশি পরিচিত আয়াতুল্লাহ খোমেনি নামেই। কট্টর মতাদর্শের খোমেনিই মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় ফের কট্টরবাদী ইসলাম ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনেকের মতে, ধর্মীয় উগ্রতার সেই নবজন্ম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করেছিলো পরবর্তীকালে ছড়িয়ে পড়া ইসলামী সন্ত্রাসবাদের। সন্ত্রাসের আগুনে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বিরাট অংশ এতোদিন পুড়লেও, ইরান মোটামুটি নিরাপদেই ছিলো। কিন্তু বুধবারের দুপুর দেখিয়ে দিলো, মধ্য এশিয়ায় কট্টরবাদের স্রোত ফিরিয়ে আনা ইরান এবার নিজেই আক্রান্ত হলো সন্ত্রাসে।

দায় স্বীকার করেছে আইএস: এদিকে ইরানের পার্লামেন্ট ভবন এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গি গোষ্ঠীটির বার্তা সংস্থা আমাক বুধবার জানায়, ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা খোমেনির মাজার এবং ইরানের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করেছে। ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগের প্রধান রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আইআরআইবিকে বলেছেন, তারা আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছেন এবং একদল সন্ত্রাসীকে আটক করেছেন। ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় লোকজনকে গণপরিবহনে চলাফেরা করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।