পদ-পদবি সঙ্কটে বিএনপি নেতারা

 

স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির বর্তমান স্ট্যাটাস নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন অনেকেই

স্টাফ রিপোর্টার: দলের জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির বর্তমান স্ট্যাটাস নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে বিএনপিতে। চলতি বছরের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর এ পরিস্থিতির সূত্রপাত। ওই কাউন্সিলের পর দলের নতুন নির্বাহী কমিটির আংশিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাকি পদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যে কারণে নতুন ও পুরনো কমিটি মিলিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে দলটির অভ্যন্তরে।

দেখা গেছে, আংশিক কমিটি ঘোষণার ফলে বেশ কয়েকজন নেতা সাবেকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। আবার যেসব পদে এখনও ঘোষণা বাকি রয়েছে সেগুলোতে আগের কমিটির নেতারাই বহাল রয়েছেন বলে প্রকারান্তরে গণ্য হচ্ছেন। সদ্য সাবেক হওয়া নেতারা পদ না থাকায় রয়েছেন অস্বস্তিতে। তারা দলীয় কর্মসূচিতেগুলোতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিপরীতে পুরনো কমিটিতে থাকার সুবাদে অনেক নেতাই স্বপদে রয়েছেন- এমন পরিচয়ে দলীয় নানা কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এদিকে ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর নতুন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো নামই ঘোষণা করা হয়নি। এ কারণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অংশ নেয়া নেতারাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দলের জাতীয় স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির বর্তমান স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পঞ্চম কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ষষ্ঠ কাউন্সিলের পরে এখন আমার দলীয় পরিচয় কী, তা আমি জানি না। ইতোমধ্যে দলের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ আরও কিছু পদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমি আশা করব, দলের চেয়ারপারসন দ্রুতই পুরো কমিটির ঘোষণা দেবেন।

তবে স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে অংশ নেয়া অপর এক নেতা বলেন, যেহেতু কাউন্সিলের পরে আগের কমিটির কোনো বৈধতা থাকে না। এ কারণে তিনি ওই বৈঠকটিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের চা-চক্র ছাড়া অন্য কিছু বলতে চান না। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ বলেন, ষষ্ঠ কাউন্সিলের পরে যেসব পদে নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব পদ ছাড়া আগের কমিটিই বহাল থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ৩ জন জীবিত নেই। আবার অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ আর স্থায়ী কমিটিতে থাকতে চাচ্ছেন না। এ কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিলো কাউন্সিলেই। কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এতদিনেও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা না হওয়ার কারণ তারা জানেন না।

ওই নেতারা আরও বলেন, সাধারণত কাউন্সিলের পরে দলের চেয়ারপারসন নতুন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু এবার তিনি সেটা না করে আগের কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ ষষ্ঠ কাউন্সিলের আগে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকটিই ছিলো সমাপনী বৈঠক। ওই বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা সেভাবেই বক্তব্য দিয়েছিলেন।

এদিকে নির্বাহী কমিটির আংশিক ঘোষণা হওয়ায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা পদ-পদবি ছাড়াই চলছেন। বিগত দিনে দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানও তাদের একজন। এছাড়াও রয়েছেন যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বরকত উল্লাহ বুলু এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের গোলাম আকবর খন্দকার ও খুলনা বিভাগের মশিউর রহমান।

নতুন-পুরনোবিষয়ক এ জটিলতার অবসান কবে হবে সে সম্পর্কে কোনো নেতাই কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, কোনো এক সময় চেয়ারপারসন নিজেই স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করবেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদ্য সাবেক এক নেতা বলেন, আমরা না পারছি কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে, না পারছি বাসায় বসে থাকতে। কারণ বাসায় প্রতিদিন বহু নেতাকর্মী দেখা করতে আসেন। তারা নানা প্রশ্ন করেন। কোনো উত্তর দিতে পারি না। কী যন্ত্রণায় যে আছি, বলে বোঝানো যাবে না!