পথের কাটা পরিষ্কার করতেই গাংনীর ইউপি সদস্য কামাল খুন : হত্যা মামলা দায়ের

গাংনী প্রতিনিধি: পথের কাটা পরিষ্কার করতেই মেহেরপুর গাংনীর ষোলটাকা গ্রামের ইউপি সদস্য কামাল হোসেনকে খুন করা হয়েছে। পূর্বের তিনটি বিষয় নিয়ে কামাল পরিবারের সাথে জামাতা মাজেদুল পক্ষের শত্রুতা চলছিলো। কামাল হোসেন ছিলেন পরিবার ও সমাজের একটি পক্ষের নেতা। মাজেদুল ও তার সহযোগী রহমতুল্লাহর অপরাধ জগতের কাজে বাধা ছিলেন কামাল ও তার পরিবার। তাই কামাল হোসেনকে সরিয়ে দিয়েছে তারা। এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও নিহতের পরিবার থেকে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এদিকে ১২ জনকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার গাংনী থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেছে নিহত কামাল হোসেনের পরিবার। অবশ্য ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে রয়েছে আসামিরা।

এলাকার বিভিন্ন মাধ্যম ঘেটে জানা গেছে, কামাল হোসেনের ভগ্নিপতি ষোলটাকা গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার কাছে মোবাইলে চাঁদা দাবি করে কতিপয় চাঁদাবাজ। চাঁদা না দেয়ায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাতে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে। এতে ১২ লক্ষাধিক টাকার মাছ মারা যায়। বিষ প্রয়োগের সাথে জড়িত সন্দিগ্ধ চাঁদাবাজ ষোলটাকা গ্রামের বিছার উদ্দীনের ছেলে রহমতুল্লাহ (৪০) ও জুগিরগোফা গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে সাবদার আলী ওরফে পল্টুকে (৪২) ২৪ মে গাংনী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। চাঁদা দাবিকৃত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এর আগে কামালের ভাতিজা ফারুক হোসেনের পুকুরেও একই কায়দার বিষ প্রয়োগ করে মাছ মেরে দেয় চাঁদাবাজরা। ঘটনার সাথে কারা জাড়িত তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে ফারুক থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে মাজেদুল ও রহমতুল্লাহসহ তাদের সঙ্গীয় কয়েকজনকে সন্দেহ করা হয়।

এদিকে ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের সময় কামাল হোসেনের বিরোধিতা করে তার ভাইয়ের জামাই মাজেদুল ইসলাম। এরপরেও কামাল বিজয়ী হওয়ায় মাজেদুলের ক্ষোভ বেড়ে যায়। অনেকটাই পায়ে পা বাধিয়ে বিরোধ করছিলো মাজেদুল, রহমতুল্লাহ ও আলমগীরসহ তাদের পক্ষের লোকজন। ওই দুটি কারণ ছাড়াও মাজেদুল ও রহমতুল্লাহর নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন ইউপি সদস্য কামাল হোসেন। গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতেন। ওই পক্ষের অপকর্মের একমাত্র বাধা ছিলেন কামাল হোসেন। তাই পথের কাটা পরিষ্কার করতেই কামাল হোসেনকে দীর্ঘদিন থেকেই সরিয়ে দেয়ার খায়েস ছিলো। শেষ পর্যন্ত তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে এভাবে যে কামালকে চিরদিনের মতো বিদায় নিতে হবে তা কে জানতেন। এমন মন্তব্য গ্রামের অনেকেরই।

এদিকে কামাল হোসেন খুনের ঘটনায় গাংনী থানায় খুনের মামলা এজাহারভুক্ত (রেকর্ড) হয়েছে। নিহতের ভাই মৃত আরোজ উল্লাহর ছেলে ফারুক হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ষোলটাকা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে আলমগীর হোসেন ১ নং আসামি ও মাজেদুল ইসলামের হুকুমে হামলা ও খুন করা হয়েছে বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্ত চাঁদাবাজ রহমত বিশ্বাস ওরফে রহমতুল্লাহসহ মোট ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করছে না পুলিশ।

গাংনী থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) কাফরুজ্জামান বলেন, আসামি গ্রেফতারের পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে পারবো। এসআই শহিদুল ইসলামকে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আসামি গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিতের বিষয়ে পুলিশের কঠোর ভূমিকার কথা বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে ষোলটাকা গ্রামের কামাল হোসেনের বড় ভাইয়ের জামাই মাজেদুল ইসলামসহ তার লোকজন তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে কামাল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে রক্তাক্ত জখম হন কামালের ভাই কাফেল উদ্দীন। খবর পেয়ে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন কামাল হোসেন। বাড়ির অদূরবর্তী স্থানে তাকে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেয় তার বাড়িতে হামলাকারীরা। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় কফেল উদ্দীনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকারী মাজেদুল ইসলাম নিহত কামালের বড় ভাইয়ের জামাই হলেও দুই পরিবারের মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। নিহত কামাল হোসেন ষোলটাকা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে ও ষোলটাকা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য।