ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা মানে নিজের মক্কেলকে জেতানো নয় : আইনের দৃষ্টিতে দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করা

স্টাফ রিপোর্টার: বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে জেলা বারের ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ প্রেক্ষিত চুয়াডাঙ্গা জেলা বার’ শীর্ষক আলোচনাসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ শিরিন কবিতা আখতার বলেছেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের যেমন সমন্বয় দরকার, তেমনই দরকার বিচারালয়ের পরিবেশ। জেলা পর্যায়ের বিচারের জন্য কক্ষগুলো তথা আদালতগুলো এতোটাই ছোট যে, বাদী-বিবাদীর আইনজীবীর পর জনাকীর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা অসম্ভব। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইতোমধ্যে আবেদনও প্রেরণ করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনতায়নে মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে জেলা বারের ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ প্রেক্ষিত চুয়াডাঙ্গা জেলা বার শীর্ষক আলোচনাসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ শিরিন কবিতা আখতার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা মানে নিজের মক্কেলকে জেতানো নয়। আইনের দৃষ্টিতে দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু আইনজীবীদের মধ্যে রেওয়াজ, যেনতেনভাবে হলেও নিজের পক্ষের মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। এ রেওয়াজ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে কীভাবে? আমাদের সকলকেই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধীর শাস্তির বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে তার সুফল আমাদের সমাজই ভোগ করবে।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে উপস্থাপিত মূল বক্তব্যের ওপর বিশদ আলোকপাত করেন আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, আইনজীবী ও বিচারকদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে মানবাধিকারের দিকে। মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয়, সেদিকটা বিবেচনায় রাখলে বিচারপ্রার্থী ও বিচারের মুখোমুখি ব্যক্তি উভয়ই আইনের প্রতি আস্থাশীল হবে। আমি যদি মানবাধিকারে কাজ করি তাহলে রাজনীতি করতে হবে। আর সে রাজনীতি যেন কোনো দলের না হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে যেখানেই থাকি, যে দলেরই মতাদর্শের হই না কেন, মানবাধিকার প্রশ্নে আমাদের এক হতে হবে। মানবাধিকারের কাজ সেবার কাজ। আমাদের নির্ভয়ে কাজ করতে হবে। আমি যদি শঙ্কা নিয়ে কাজ করি তাহলে নির্ভয়ে কাজ করতে পারবো না। আমাদের সৎ ও সততার সাথে কাজ করতে হবে।

র‌্যাব হেফাজতে মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে অ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, একটি সংস্থার হেফাজতে তিনি মারা গেলেন। অবাক হলেও সত্য যে, কেউ মুখ খুলছে না। আমি যেটুকু বলেছি পত্রপত্রিকায় দেখেছি আমার বরাত দিয়ে সেটুকুই এসেছে। অথচ মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে আমরা যারা সচেতন, দায়িত্বশীল আমাদের সকলকেই সম্মিলিতভাবে মুখ খোলা দরকার। কেন বলতে পারছি না তা জানি। এরপরও মানবাধিকার প্রশ্নে সম্মিলিত হওয়া দরকার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. এবিএম মাহমুদুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. মনছুর উদ্দীন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হেদায়েত হোসেন আসলাম, জিপি আল আজমোল্লা আব্দুর রশিদ, পিপি অ্যাড. শামশুজ্জোহা, আইন ও সালিস কেন্দ্রের সিনিয়র উপপরিচালক সানাইয়া ফাহিম আনসারী, সিনিয়র সমন্বয়কারী তৌফিক আল মান্নান ও অ্যাড. সুপ্রিয় চক্রবর্তী। মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাড. বজলুর রহমান। উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সাঈদ মাহমুদ শামীম রেজা ডালিম। বক্তব্য রাখেন অ্যাড. এমএম শাহাজান মুকুল, অ্যাড. নরুল ইসলাম, অ্যাড. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।jaj