নির্বাচন ছাড়া স্কুল-কলেজ কমিটির শীর্ষ পদে এমপিরা নয়

 

হাইকোর্টের রায় বহাল : তবে যারা আছেন তাদের থাকতে বাধা নেই

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বেসরকারি স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির (পরিচালনা কমিটি) সভাপতি পদে জাতীয় সংসদ সদস্যগণের (এমপি) নিয়োগ সংক্রান্ত ধারা অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিশেষ কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া রায়ও বহাল রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গতকাল রোববার এই আদেশ দেন।

একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে এমপিদের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫(২) ধারা অবৈধ ঘোষণা করে। ওই ধারায় উল্লেখ রয়েছে, এমপিরা যে চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হতে ইচ্ছুক তা জানিয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পত্র দেবেন। আর এই পত্রই তাদের নিয়োগ বলে গণ্য হবে। এখন এই ধারা অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় কোনো এমপি আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে নির্বাচন ছাড়া সভাপতি পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যারা (এমপিরা) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিযুক্ত আছেন তারা বহাল থাকতে পারবেন। কেননা রিট আবেদনে শুধু নিয়োগ সংক্রান্ত ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এমপিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। রিট মামলায় ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও পক্ষভুক্ত করা হয়নি।

জানা গেছে, বিশেষ কমিটি গঠন করে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদ পরিচালনা করা হতো। রিট মামলায় বিশেষ কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫০ ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিলো। হাইকোর্ট বিশেষ কমিটি গঠন সংক্রান্ত এই ধারা অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বাধীন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিশেষ কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। আদালত ভিকারুননিসার বিশেষ কমিটি বাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ওই অ্যাডহক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতেও বলা হয়। হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন রাশেদ খান মেনন এমপি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন। আবেদনের পক্ষে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং রিটকারী আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ শুনানি করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ না করে স্থগিত আবেদনের ওপর নো অর্ডার দেন।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদনের ওপর কোনো আদেশ দেননি আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করলে তখন বিষয়টি আদালত বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন। রায়ের কপি পেলে আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে নিয়মিত লিভ পিটিশন দায়ের করবো।

ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, সর্বোচ্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিষয়ে নো অর্ডার দিয়েছেন। এতে হাইকোর্টের রায় বহাল রইলো। এর ফলে সংসদ সদস্যরা নির্বাচন ছাড়া বেসরকারি স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর সংশ্লিষ্ট দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন এই আইনজীবী।