নিজস্ব জমিতে একাডেমিক ক্যাম্পাস স্থানান্তর না করা ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্ধারিত সময়ের পরও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে একাডেমিক ক্যাম্পাস স্থানান্তর না করা ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অনুমতি দেয়ার সময় শর্ত ছিলো এসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করবে। কিন্তু অধিকাংশই তা করেনি। একাধিকবার তাদের নোটিস দিয়েও নিজস্ব ক্যাম্পাসে নিতে পারেনি। সর্বশেষ তাদের শোকজ করা হয়েছে। তাও অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শোকজের জবাব পর্যন্ত দেয়নি। এভাবে তাদের চলতে দেয়া যায় না। জানা গেছে, এর আগে ২০১৩ সালে এক মাস সময় বেঁধে দিয়েও একই ধরনের নোটিস দিয়েও জবাব পায়নি বোর্ড। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও মান রক্ষায় এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

দেশে বর্তমানে ৪৬১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও প্রায় সবার নাজুক অবস্থা। প্রথম সারির ৩০-৩৫টি বাদ দিলে বাকি ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরপরও থেমে নেই নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের। বোর্ড ও বেসরকারি পলিটেকনিকের একটি সিন্ডিকেট নানা সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। সর্বশেষ নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যর্থতায় স্বীকৃতি/পাঠদান কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে ১ মাসের মধ্যে জবাব চেয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে শোকজ করা হয়েছিল। এরমধ্যে মাত্র ৩৬টি প্রতিষ্ঠান এর জবাব দিয়েছে।

কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা জবাব দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা জবাব দেয়নি তাদের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছি। কারিগরি বোর্ড থেকে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ২০ মার্চ নিজস্ব জমিতে যাওয়ার জন্য আপনাদের কারণ দর্শানোর নোটিস করা হয়েছিলো। কিন্তু অদ্যাবধি এর জবাব পাওয়া যায়নি। যা ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম পরিচালনার নীতিমালা ৩৫.৩ ধারার পরিপন্থী। এই অবস্থায় কেন আপনার প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অনুমতি স্থগিত বা বাতিল করা হবে না তার জবাব দিতে হবে। এই জবাব দেয়ার জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। নিজস্ব জমিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে আর্থিক সমস্যা, নিজস্ব জমিতে গেলে শিক্ষার্থী না পাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপের কথা বলা হয়েছে মালিকদের পক্ষ থেকে।

বোর্ডের পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মাসেও অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান জবাব দেয়নি। যারা জবাব দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। এই অবস্থায় বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসব প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি সাময়িক স্থগিত করতে পারে বোর্ড।

বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি পলিটেকনিকের জন্য ১৫০ থেকে ২শ’ বর্গফুট বিশিষ্ট ৯টি সাধারণ কক্ষ, প্রতিটি টেকনোলজির জন্য ৪টি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের বসার জন্য দুটি পৃথক কক্ষ, পদার্থ ও রসায়নের জন্য ২শ’ বর্গফুটের জন্য ২টি পৃথক কক্ষ থাকতে হবে। এছাড়া সিভিল/আর্কিটেকচার কোর্সের জন্য ৪শ থেকে ৬শ’ বর্গফুটের ১০টি ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ, মেকানিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৪শ’ থেকে ৬শ’ বর্গফুটের ৮টি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৬টি, ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির জন্য ৫টি, কম্পিউটার টেকনোলজির জন্য ৬টি, পাওয়ার টেকনোলজির জন্য ৫টি পৃথক ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ থাকতে হবে।

এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিদর্শক বিজয় কুমার ঘোষ বলছিলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার তাগাদা দেয়ার কারণ কারিগরি শিক্ষার মান রক্ষা করা। সরকার এ শিক্ষাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে কারিগরিতে ভর্তির হার ২০ ভাগের বেশি করার জন্য কাজ করছে। আমরা চাই ভর্তির হার বাড়ার পাশাপাশি মান যেন ঠিক থাকে। কিন্তু এখানে কিছু বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মান রক্ষা করা যাবে।