নাশকতার উদ্দেশে ঢাকায় : আত্মঘাতী দলের ৫ জন গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে বৃহস্পতিবার রাতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট। গতকাল শুক্রবার তাদের ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল আলীম। শুনানিশেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুত জামান আনছারী তাদের প্রত্যেককে ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আতিকুর রহমান ওরফে আইটি আতিক, আবদুল করিম বুলবুল ওরফে ডা. বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, মতিউর রহমান ও শাহিনূর রহমান হিমেল ওরফে তারেক। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বোমা তৈরির ২টি ডেটনেটর ও ৮৭৫ গ্রাম জেল উদ্ধার করা হয়েছে।  এদের মধ্যে আবদুল করিম বুলবুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রাম। ৫ বছর আগে জেএমবি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়। ২ বছর আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রামের বাড়িতে হোমিও চিকিত্সা শুরু করেন। দুই মাস আগে এলাকা থেকে সে নিখোঁজ হয়।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজমের ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা সবাই আত্মঘাতী হামলাকারী দলের সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নবগঠিত জেএমবির কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। নাশকতা করতে ও বোমা তৈরির কাজে তাদেরকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আতিকুর রহমান নব্য জেএমবির উচ্চপদে রয়েছেন। তিনি বোমা বানাতে পারদর্শী। অন্যরা সবাই সদস্য। এদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ রয়েছে। বড় ধরনের হামলার উদ্দেশে তারা ঢাকায় আসে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশের অভিযানে এই পাঁচজনকে ধরা গেলেও  আরও চারজন পালিয়ে যায়। তাদের নাম নান্নু, সজীব, ইমরান ও জিপসি বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃত ৫ জনের নাম নিখোঁজদের তালিকায় ছিল কীনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস আগে তারা গৃহত্যাগ করেছে বলে তারা আমদের জানিয়েছে। আমরা তাদের দেওয়া ঠিকানা পেয়ে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখব।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান বলেন, ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকার জেএমবির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ওই বছর ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় মুন্সিগঞ্জ বাদে একযোগে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টানা অভিযানে দলটি দুর্বল হয়ে গেলেও গত দুই বছরে তারা নতুন করে সংগঠিত হয়ে একের পর এক হত্যা-হামলা চালাচ্ছে।

কেন এদের নব্য জেএমবি বলা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত এক বছর ধরে আমাদের ব্রিফিং যদি ফলো করেন, তাহলে দেখবেন আমরা বলে আসছি যে, জেএমবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তারা মাওলানা সাইদুর রহমানের জেএমবিতে অনুপ্রবেশ করলেও এখান থেকে একটি গ্রুপ বের হয়ে যায়। ওই গ্রুপটিই নব্য জেএমবি।

তিনি বলেন, জেএমবির একটি গ্রুপ কখনও জসীম উদ্দিন রাহমানির নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। তারা সবসময় নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের উত্থানের পর তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে গত এক বছর ধরে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।

মনিরুল ইসলাম আরও জানান, গুলশানের ঘটনার পর কল্যাণপুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের অন্তত ১০টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। গুলশান ঘটনার দিন জঙ্গিরা ভেতর থেকে বাইরে যে ছবি ও মেসেজ পাঠিয়েছিল, তা মারজান (সাংগঠনিক নাম) নামের এক তরুণ ছড়িয়ে দেয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সে (মারজান) ঢাকায় অবস্থান করছে। সে শিক্ষিত ছেলে বলে মনে হয়েছে। তার একটি ছবি গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে রয়েছে।