ধোপে টেকেনি শিশুর পা ধরে টানার অভিযোগ ॥ ডেকে নিয়ে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা রুজু

বোরকা পরে চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়ে গণধোলাইয়ের শিকার দু যুবক আজমুল ও সাগর থানা থেকে বাড়ি ফিরেছে

স্টাফ রিপোর্টার: বন্ধু সাগরকে সাথে নিয়ে বোরকা পরে দৌলাতদিয়াড় ভোকেশনালের সামনে অবস্থানকালে গণধোলাইয়ের শিকার আজমুল হক থানা থেকে বাড়ি ফিরেছে। গতকাল সকালে তাকে তার বড় ভাই আমানুল্লাহ জিম্মায় নেয়ার পাশাপাশি তাকেসহ তার বন্ধু সাগরকে মারপিটের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ভোকেশনালের অদূরবর্তী কোরিয়াপাড়ার মামুনসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের দু তিনশজনকে আসামি করা হয়েছে।
আজমুল হকসহ দুজন বোরকা পরে কোরিয়াপাড়ার সজিবের শিশুকন্যা সুমাইয়াকে তাদের বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় পা ধরে টানার যে অভিযোগ পরশু রাতে উত্থাপন করা হয়, ওই অভিযোগ শেষ পর্যন্ত পুুলিশি জেরার কাছে পাত্তা পায়নি। কেউ বাদী হয়ে মামলাও করেননি। গতপরশু রাত সাড়ে নটার দিকে আজমুল হক ও সাগর চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় টেকনিকেল স্কুল ও কলেজের (ভোকেশনাল) সামনে জনরোষে পড়ে রামধোলাইয়ের শিকার হয়। আজমুল হক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিনেমাহলপাড়ার মৃত আবু তাহেরের ছেলে। সাগর কাটপট্টির কাঠমিস্ত্রির কাজ করে। সে বেলগাছি তেতুলতলাপাড়ার কামরুজ্জামান পানুর ছেলে। গণপিটুনির খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে প্রাণে রক্ষা করতে গেলে পুলিশকেও নাজেহাল হতে হয়। পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয়দের নিকট থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনন।
আজমুল হক বখাটে প্রকৃতির যুবক। যখন গুজবে কাতর চুয়াডাঙ্গা তখন সে কেন বোরকা পরে দৌলাতদিয়াড়ে? এ প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, তার প্রেমিকার কিছুদিন আগে বিয়ে হয় ভোকেশনালের নিকটস্থ কোরিয়াপাাড়ায়। কয়েকদিন আগে প্রেমিকার স্বামীর মোবাইলফোন কেড়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে দৌলাতদিয়াড়ে গেলে প্রেমিকার স্বামী ও প্রেমিকার ভাইসহ তাদের লোকজন ভয় দেখায়। সেই ভয়ের কারণেই বোরকা পরে ছদ্মবেশে প্রেমিকার হাতে মোবাাইলফোনটি ফেরত দেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। সুযোগ না পেয়ে ভোকেশনালের সামনে অবস্থান করি। এমন সময় কয়েকজন ছুটে এসে মারধর শুরু করে। সাগর পালিয়ে রক্ষার চেষ্টা করেও পার পায়নি। আজমুল হককে মেরে গুরুতর আহত করা হয়। অপরদিকে কোরিয়াপাড়ার সজিবের স্ত্রী ও মা বলেন, দুজন বোরকা পরে রাত ৯টার দিকে আমাদের বাড়ির উঠোনে আসে। শিশু সুমাইয়া ঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিলো। ওর পা ধরে টানে। সুমাইয়া চিৎকার করে। এ অভিযোগ শুনে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা সাথে সাথে অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলেন। পাল্টা কয়েকটি প্রশ্নের সদোত্তর দিতে না পারায় তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাধে। পুলিশ বলে, গুজবের মধ্যে এ অভিযোগ মনগড়া বলেই মনে হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে আজমুল হক ও সাগরকে পুলিশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করায়। গতকাল সকালে আজমুলকে তার বড় ভাই আমানুল্লাহ ও সাগরকে তার পিতা কামরুজ্জামান পান্নুর হাতে তুলে দেয় পুলিশ। আজমুলের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়েছে, আজমুলকে হত্যার উদ্দেশে কৌশলে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মারপিট করে। পুলিশ এ মামলা গ্রহণ করে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।