দেশীয় মাছ ও জলজপ্রাণী হুমকির মুখে

মেহেরপুরে নদ-নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেলার প্রধান ৪ নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে দেশীয় মাছ শিকার চলছে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় দেশীয় মাছ ও জলজপ্রাণীর বংশ বিস্তার হুমকির মুখে। অন্যদিকে আড়াআড়ি বাঁধ দেয়ায় পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণে মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসনের তেমন কোনো ভুমিকা নেই।
জানা গেছে, মেহেরপুরের প্রধান নদ ভৈরব। গেলো বছর ভৈরব নদের ২৯ কিলোমিটার পুনর্খনন হয়েছে। ফলে অনেকটাই স্বরুপে এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব। এবার বর্ষা মৌসূমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্য বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। ফলে ভৈরব নদ পানিত টইটুম্বর। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি। তারা কারেন্ট জাল দিয়ে ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে মাছ শিকার করছে।
মাথাভাঙ্গা, কাজলা ও ছেউটিয়া জেলার প্রধান নদী। এসব নদীতেও পানিতে ভরপুর। খালবিলেও পানি রয়েছে। ফলে স্থানীয় হাটবাজারে দেশী শিং, মাগুর, পুঁটি, বাইন, টেংরা, টাকি, খলিশা, চান্দা, মলা-ঢেলা ইত্যাদি মাছের দেখা মিলছে। মাথাভাঙ্গা নদীর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রাম থেকে ষোলটাকা ইউনিয়নের কেশবনগর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ ও ঘের দেয়া হয়েছে। স্থায়ী এসব ঘের ও বাঁধের ফলে নদীর পানি চলাচলেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
কেশবনগর গ্রামের কৃষক আকছেদ আলী বলেন, গ্রামের প্রভাবশালীদের দখলে মাথাভাঙ্গা নদী। কচুরিপানা ও ডালপালা দিয়ে ঘের বানিয়ে মাছ ধরে। ঘের তৈরি ব্যয়বহুল তাই গরিব জেলেদের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। স্থায়ীভাবে ঘের তৈরির কারণে সাধারণ মানুষের নদীতে নামার সুযোগ কম। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় মাছ শিকার চলছে।
মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কারেন্ট জাল ও বাঁশের ঘের দিয়ে মাছ শিকার নিষিদ্ধ এবং দ-নীয় অপরাধ। প্রজননকালীন সময়ে ডিমওয়ালা মা মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন উপেক্ষা করেই যত্রতত্র মাছ শিকার করা হচ্ছে। এখনো এসব বাঁধ বিদ্যমান।
গাংনী উপজেলার তৃতীয় প্রধান নদী ছেউটিয়া। বানিয়াপুকুর গ্রাম থেকে সদর উপজেলার রাজনগর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধের ছড়াছড়ি। বাঁশের বাঁধে কারেন্ট জালে তৈরি বেসাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে কয়েক বছর থেকেই। এতে নদীর পানিপ্রবাবের বিঘœ ঘটলেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় প্রধান নদী কাজলা। গাংনী উপজেলার নওপাড়া থেকে সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মাঠ পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য বাঁধ। এ নদীতেও বেসাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে।
মৎস্য শিকারির কয়েকজন বলেন, মুক্ত জলাশয়ের মাছ, তাই শিকার করছি। এটি আমাদের পেশা না হলেও নেশার বশে প্রতি বছর মাছ ধরি। তাছাড়া মাছ বেশি পেলে বিক্রিও করা হয়। এতে বর্ষা মৌসূমে কিছু আয়ও হয়।
মেহেরপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে বছরে ১২ হাজার ৪৩৯ টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ৯ হাজার ৮০৫ টন। এর মধ্যে ৯০ ভাগ জোগান আসে চাষকৃত মাছ থেকে। আর মুক্ত জলাশয় কিংবা নদ-নদী থেকে মাত্র ১০ ভাগ আসে। জেলার ৪টি প্রধান নদ-নদী ও খালবিলে যদি এ বছরের মতো পানি থাকে এবং দেশী প্রজাতির মাছ স্বাভাবিক বংশবিস্তার করতে পারে, তাহলে চাহিদার ৮০ ভাগ এখান থেকে পূরণ করা সম্ভব।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, নিজেদের স্বার্থেই দেশীয় মাছ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। নদ-নদীর অবৈধ বাধ দ্রুত অপসারণ করা হবে।