দুই গির্জায় বোমা হামলায় রক্তাক্ত মিশর : আইএস’র দায় স্বীকার

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিসরে দুটি গির্জায় বিস্ফোরণে অন্তত ৪৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় তানতা শহরে সেন্ট জর্জ’স কপটিক চার্চ টার্গেট করে প্রথম হামলাটি হয় এবং বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে আলেকজান্দ্রিয়ায় বিস্ফোরণে নিহত হয় অন্তত ১৮ জন। গতকাল রোববার কপটিক খ্রিস্টানদের গির্জায় এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল নাইল নিউজ এর খবরে বলা হয়, রোববার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুটি হামলার ঘটনা ঘটে। নীল নদের তীরবর্তী শহর তানতায় সেন্ট জর্জ কপটিক চার্চে প্রথম হামলায় অন্তত ২৭ জন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হন। কয়েক ঘণ্টা পর আলেক্সান্দ্রিয়ার সেন্ট মার্ক কপটিক চার্চে দ্বিতীয় হামলায় তিন পুলিশসহ অন্তত ১৬ জন নিহত এবং ৪১ জন আহত হন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। আইএস এর মুখপত্র আমাক বলছে, ইসলামিক স্টেটের অংশ একটি দল মিশরের তানতা এবং আলেক্সান্দ্রিয়া শহরের দুইটি গির্জায় হামলা চালিয়েছে। আলেক্সান্দ্রিয়ার গির্জায় হামলার সময় কপটিক গির্জার প্রধান পোপ তাওয়াদ্রোস (দ্বিতীয়) সেখানে একটি ম্যাসে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী পোপ তাওয়াদ্রোস অক্ষত আছেন।

পোপের সচিব বলেন, একজন আত্মঘাতী হামলাকারী চার্চের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। আর তানতায় প্রথম বিস্ফোরণ সম্পর্কে নাইল নিউজকে প্রাদেশিক গভর্নর আহমদ দেইফ বলেন, হয় বোমাটি গির্জার ভেতর পেতে রাখা হয়েছিলো অথবা কেউ আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। কপটিক ইস্টারের এক সপ্তাহ আগে হামলার ঘটনা ঘটলো। চলতি মাসেই মিসর সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের। তিনি এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। মিসরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নীল নদের তীরবর্তী এবং কায়রো থেকে একশ’ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে অবস্থিত তানতার গির্জায় প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে ২৭ জন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, কয়েক ঘন্টা পর আলেকজান্দ্রিয়ার আরেকটি কপটিক গির্জায় আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১৮জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই সময় গির্জায় কপটিক পোপ উপস্থিত ছিলেন। সেইন্ট মার্কস ক্যাথেড্রালে একটি ম্যাস অনুষ্ঠানে ছিলেন। তবে তিনি অক্ষত আছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। একজন খ্রিস্টান নারী বলেন, হামলার পর চারদিকে কেবলই রক্ত দেখা যায়। মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রবিবার হওয়ায় প্রার্থনার জন্য বহু মানুষের সমাগম ঘটেছিলো। গত কয়েক বছর ধরে মিশরের সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা। গত বছরের ডিসেম্বরে কায়রোর এক কপটিক গির্জায় প্রার্থনা চলাকালীন এক বোমা বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত হয়েছিলো। তানতায় হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “গির্জার হলে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ হওয়ার পর কক্ষটি আগুন ও ধোঁয়ায় ভরে যায়। অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, অনেকের পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ঘটনার সময় সেন্ট জর্জ গির্জার ওই কক্ষে অবস্থান করা একজন খ্রিস্টান নারী বলেন, কক্ষের পুরো মেঝে রক্তে ভেসে গেছে। চারিদিকে মানবদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ পড়ে আছে।” মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং প্রধানমন্ত্রী শেরিফ ইসমাইলের সেন্ট জর্জ  গির্জায় যাওয়ার কথা রয়েছে বলেও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়। এ হামলার পর সিসি জরুরি জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের বৈঠকও ডেকেছেন।

সামপ্রতিক বছরগুলোতে মিসরে প্রায়ই খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সমপ্রদায়কে লক্ষ্য করে জঙ্গিদের হামলার ঘটনা ঘটছে। মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী এধরনের আরো হামলার আশঙ্কায় সতর্ক রয়েছে। প্রাদেশিক গভর্নর আহমেদ ডেইফ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত নাইল চ্যানেলে বলেন, সেখানে আগে থেকে বোমা পেতে রাখা হতে পারে কিংবা আত্মঘাতী বিস্ফোরণও ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। প্রথম হামলার পর আশেপাশের এলাকায় আরো বিস্ফোরক থাকতে পারে এই আশঙ্কায় তল্লাশি চালানো শুরু হয়। গত ডিসেম্বর মাসে বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল কায়রোর কপটিক ক্যাথেড্রাল। মিসরে মাত্র ১০ ভাগ খ্রিস্টান রয়েছে।