দালালদের কাছে জিম্মি চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসের গ্রাহক সাধারণ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসের ভেতরে-বাইরে দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক থেকে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গ্রাহকরা মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসে প্রবেশ করার আগেই বাইরে থাকা দালালদের খপ্পরে পড়ছেন। সাধারণ গ্রাহকরা অভিযোগ করেন বেশির ভাগ দালালই জেলার বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের আস্থাভাজন পরিচয়ে বীরদর্পে এসব অপকর্ম করছেন।

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসে গেলে দেখা যায় অফিসের ভেতরে ও বাইরে ২৫/৩০ জন দালালের অবস্থান। এদের মধ্যে ১০/১২ জন দালাল প্রকাশ্যে অফিসের মধ্যেই নানা অপকর্ম করছেন। কোনো গ্রাহক তার বাহনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিআরটিএ অফিসের কাছে এলেই বাইরে অবস্থান করা দালালরা অনেকটা জোর করেই মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছেন। সহজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্ব সম্পন্ন করাসহ রেজিস্ট্রেশনের কথা বলে তিন থেকে চার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব দালাল অনেক সময়ই নিজেদেরকে অফিসের স্টাফ পরিচয় দিয়েও গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার একজন প্রতারিত গ্রাহক জানান, কয়েক মাস আগে তিনি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিআরটিএ অফিসে এলে এক দালাল তার কাজ করে দেয়ার কথা বলে কাগজপত্র ও সাড়ে তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। সে নিজেকে অফিসের স্টাফ পরিচয় দেন। মাস দুয়েক ঘোরানোর পর তিনি জানতে পারেন ওই ব্যক্তি দালাল। তার মোটরসাইকেলের কোনো কাগজপত্রই অফিসে জমা পড়েনি। টাক বা ব্যাংকের রসিদের কথা বললে নানা অজুহাতে ঘোরাতে থাকেন। অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, বিআরটিএ অফিসের দালালরা অনেক শক্তিশালী। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেক সময় তাদের কাছে অসহায় হয়ে থাকেন। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হন।

বিআরটিএ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফিসের ভেতরে সবসময় দালালদের অবস্থানের কারণে প্রায়ই অফিসের সরকারি উপকরণ ও কাগজপত্র হারিয়ে যায়। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী দাফতরিক কাজে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে গেলেই গায়েব হয়ে যায় সিল, প্যাড, স্ট্যাপলার এমনকি ফাইলও।

বিআরটিএ অফিসে আসা একাধিক ব্যক্তি বলেন, এসব দালালরা অনেক ক্ষমতাধর। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছু বলতে গেলে, তাদেরকেও নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকেন। বেশির ভাগ দালালই নেশাগ্রস্ত। সম্প্রতি অফিসের অফিস সহকারীর গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে তাদের কাজে বাধা না দেয়ার জন্য হুমকি দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও শাসিয়ে যায়।

প্রায়ই দালালদের মধ্যেও বিরোধ দেখা যায়। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এসব বিষয় মৌখিকভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসকে দালালমুক্ত করার জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা কামনা করেন খোদ বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।