দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগ নেতা আজিজের জামিন লাভ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আব্দুল আজিজ জামিনে হাজতমুক্ত হয়েছেন। দামুড়হুদা হোগলডাঙ্গার আলোচিত মিজান চেয়ারম্যান হত্যামামলার আব্দুল আজিজ চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলার ৪ বছর পর তিনি গত ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ১৮ দিন জেলহাজতে থাকার পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্ত হন। এ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ১৪ জন আসামির মধ্যে মমিন মাস্টার ও আনারুল এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এরা আত্মসমর্পণও করেননি।

এদিকে আ.লীগ নেতা জামিনে মুক্ত হচ্ছেন এ খবর জানতে পেরে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, আ.লীগ নেতা আমজাদ হোসেন, লিয়াকত মেম্বার, সিদ্দিক মেম্বার, আব্বাস আলী, মহসিন আলী, মহাম্মদ আলী, নাজিম, জাহাঙ্গীর, ফারুক মাস্টার, শান্তিসহ দামুড়হুদা ও নতিপোতা ইউনিয়নের শ শ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক দুপুরের পর থেকেই জেলগেটের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় জেলহাজত থেকে বের হওয়ার পর উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে জেলগেটেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে মিছিল সহকারে তার নিজ গ্রাম নতিপোতায় নিয়ে যান। এ সময় তিনি বলেন, নিহত মিজান চেয়ারম্যান আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন এবং তিনি আমার পরম আত্মীয়ও বটে। তার হত্যাকাণ্ডের সাথে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান সপরিবারে হোগলডাঙ্গার নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে একদল সন্ত্রাসী দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে মিজান চেয়ারম্যানকে। স্ত্রী ডলি খাতুন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীদের নামে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আলোচিত ওই মামলায় হোগলডাঙ্গার রবিউল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৩৯), আব্দুল হান্নান (৪০), জমির উদ্দিন (৪২), দামুড়হুদা দশমীপাড়ার রোকনুজ্জামান রকু (৩৫), ভগিরথপুরের মাসুদ রানা (৩৭), নতিপোতার জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ও নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। রবিউল ছাড়া বাকি ৭ জন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহজাহান শেখ, এসআই রামপ্রসাদ ভক্ত, এএসআই জিয়াউর রহমান এবং জিয়াউল হক পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন এবং ৫ বার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়। অবশেষে বছর দেড়েক আগে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরিত হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর শরীফ মঞ্জুর রহমান দীর্ঘ তদন্ত শেষে আড়াই মাস আগে দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত হানেফের ছেলে রবিউল, একই গ্রামের মৃত তুফানের ছেলে হান্নান, মৃত মোহাম্মদের ছেলে শহিদুল, আকবারের ছেলে জমির, ইসাহকের ছেলে আশাদুল, আমজাদের ছেলে আনারুল, মৃত মহিউদ্দিন সরকারের ছেলে রোকুনুজ্জামান, ভগিরথপুরের মাসুদ রানা, নতিপোতার জাহাঙ্গীর, ছুটিপুরের সোহাগ, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নতিপোতা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আব্দুল আজিজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মমিন মাস্টারসহ মোট ১৪ জনের নামে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। এর মধ্যে ছুটিপুরের সোহাগ মারা গেছে। মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত অপর দু আসামির মধ্যে হোগলডাঙ্গার আনারুল ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন এবং অপর আসামি মমিন মাস্টার এলাকায় থাকলেও এখনও পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি।