দামুড়হুদায় অসময়ে শিমের আবাদ : ফুল ফলে ভরে উঠছে মাচা

 

স্টাফ রিপোর্টার: দিন বদলের পালায় চাঙ্গা হতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় এবার শীতকালীন শিমের আবাদ বর্ষাকালে শুরু হয়েছে। আগাম শিমের আবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে যাচ্ছে অনেক অসচ্ছল পরিবার। দিন বদলের পালায় চাঙ্গা হবে অসময়ে ঝুঁকি নিয়ে শিমের আবাদ করতে এগিয়ে আসা কৃষক পরিবারগুলো। এ জনপদের কৃষকরা স্বাবলম্বী হতে সব সময় আগাম জাতের সব ধরনের সবজি আবাদ করে গ্রামীণ অর্থর্নীতি চাঙ্গা করে তুলছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় গ্রামীণ অর্থর্নীতি চাঙ্গা রাখার জন্য অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি সবজি আবাদে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। বৈশাখ মাসের রোপণকৃত বীজে শ্রাবণে ফুল-ফল দেখা দেয়ার কারণে শিম চাষিরা এবার বাজার দর ভালো পেলে তাদের পরিশ্রম সার্থক হবে এমনটাই ভাবতে শুরু করেছে।এ আবাদ করে সম্ভাবনার নতুন দুয়ারের চমক দেখিয়ে দুলক্ষাধিক টাকার লাভের আশা করছে উপজেলা সদরের দশমী গ্রামের আশরাফুল নামের এক যুবক।

উপজেলার দশমী গ্রামের ইদ্রীস আলীর ছেলে আশরাফুল বলেন,চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের আব্দুল ওদুদ শাহ কলেজের পাশে মেটো রাস্তা দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলে চৌগাছা মাঠের দেখা মিলবে। ১ বৈশাখ দুবিঘা জমিতে ভাগ্নে রফিকুলের পরামর্শে শিমের আবাদ করেছি।২ বিঘার জমিতে নীরবে শিমের আবাদ করে শিমের লতায় ও ফুলে মাচা ভরে উঠেছে। মাচা ভর্তি শিমের লতাপাতা মাটি ছুঁই ছুঁই করে বাতাসে দুলছে। প্রতিটি ডগায় ফুলে ভরে উঠেছে। ইতোমধ্যে শিম আসতে শুরু করেছে। ভাগ্নের পরামর্শে ও উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালালউদ্দিনের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ ও সকল প্রকার সহযোগিতায় নিজেদের ইচ্ছায় ওই মাঠে দু বিঘা জমিতে লাইলন সুতা,চিকন তার,বাঁশের কাবারি দিয়ে ২২টি মাচা তৈরি করে অসময়ে আগাম রূপভান জাতের শিম আবাদ শুরু করেছি। বৈশাখ মাসে আগাম এ জাতের ফলনশীল শিম বীজ রোপণ করে ব্যাপক পরিচর্চার কাজ নিজে ও জন মজুরি দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা এ আবাদের পেছনে খরচ হয়ে গেছে। বাজার দর ভালো পেলে এ আবাদ থেকে দু লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবো। কঠোর পরিশ্রম, তীক্ষ্মনজরদারি,সার ও বালাইনাশক স্প্রে করার পর বৈশাখ মাসের রোপণকৃত বীজে শ্রাবণে ফুল-ফল দেখা দেয়ায় বাজার দর ভালো পেলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। টানা বর্ষার কারণে ফুল আসতে বেশ দেরি হয়েছে। কিছু কিছু শিম দেখা মিলতে শুরু করেছে।বর্ষা না হলে এতোদিন বাজারজাত করতে পারতাম।

তিনি আরও জানান, ঢাকার কাওরান বাজারে খোঁজ নিয়ে এক সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছি, এ শিমের বাজার দর প্রতি পাঁচ কেজি এক পাল্লা দর ছিলো ৮শটাকা। প্রাকৃতিকভাবে কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা না দিলে প্রায় দু লক্ষাধিক টাকার লাভের আশায় বুক বেধে আছি। তবে আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। স্থানীয় বাজারে এ জাতের শিমের চাহিদা থাকলেও বাজার দর কম পাওয়া যায়। সব ঠিক ঠাক থাকলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হলে বাড়তি খরচ কমে যাবে এবং নিজের জমিতে সেচের ব্যবস্থা থাকার কারণে চৈত্র মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, এ জাতীয় আবাদ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অসময়ে এ আবাদ থেকে চাষিরা বাড়তি আয় করতে পারে। অসময়ে এ আবাদ হলেও এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সকল ফসলের জন্য উপযোগী। তবে এ সময় এ আবাদে পোকামাকড়,শাদা মাছি,শিম ছিদ্রকারী পোকা ক্ষেতে আক্রমণ করতে পারে। নিয়মিত পরিচর্যা ও নজরদারিতে রেখে বালাইনাশক স্প্রে করলে ফলন ভালো পাওয়া সম্ভব। কৃষি ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে শিম অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উন্নতমানের আমিষ সমৃদ্ধ। কৃষকরা আগাম জাতের এ শিমের আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।