দামুড়হুদার নাপিতখালীর ইকবাল কবুতর পালনে আজ স্বাবলম্বী

শান্তির প্রতক কবুতর বার মাসে দেয় তের জোড়া বাচ্চা : রোগবালাই কম দরও ভালো

তাছির আহমেদ: বিশ্ব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে নানা প্রয়োজনীয়তা। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে তার নানা প্রয়োজনে উদ্ভাবন করেন নিত্য নতুন অনেক কিছু। এমনি এক ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের ইকবাল হোসেন। পিতার ইচ্ছায় আর নিজ কর্ম দক্ষতায় শান্তির প্রতীক পায়রা/কবুতর পালন করে তিনি সন্ধান পেয়েছেন নতুন দুয়ারের।

দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নাধীন নাপিতখালী গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে ইকবাল খুব বেশি লেখাপড়া না জানলেও তার নিজ বাড়ির ছাদে ঘটনার ডানা মেলে বলেন, বেকারত্মে জীবনযাপন করছিলাম। সে এক দুর্বিসহ জীবন। ঠিক তার মাঝে পিতা একদিন শান্তস্বরে বললেন, আজকের দুনিয়াটা অর্থের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব সভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে নানা প্রয়োজনীয়তা। সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মানুষ তার নানা প্রয়োজনে ও বেঁচে থাকার তাগিদে উদ্ভাবন করে নতুন কিছু। তোমার ইচ্ছা ও মনোবল থাকলে তুমিও পারবে কিছুমিছু। এ আত্মবিশ্বাস থাকলে তোমাকে আমি দেখাতে পারি নতুন কিছু একমাত্র সেই ঘোচাতে পারে তোমার বেকারত্মের দুর্বিসহ জীবন। পিতা সেদিন দেখালেন এই কবুতর পালনের নতুন দুয়ারের সন্ধান। পিতার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে নিজেকে বেকারমুক্ত করতে নিজ বাড়ির ছাদের ওপর টিনের ছাউনী দিয়ে তৈরি করলাম কবুতর পালনের ভৌত অবকাঠামো। অন্যের ওপর নির্ভর্শীলের আশা বাদ দিয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষে এটিকে ব্যবসা সফল আশা নিয়ে কাজ শুরু করি মাঠ পর্যায়ে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিনিময়ে ২শ’ জোড়া কবুতর কিনে ওই ভৌত কাঠামোর মধ্যে শুরু করি এগুলোর লালনপালন। বাড়ির ধান, গম, সরিষা, মসুরি ও চালডাল আর পানি প্রতিদিন দিতে থাকি তাদের খাবার হিসেবে। রোগবালাই কম। প্রতিদিনের কঠোর তদারকিতে কবুতরগুলো বয়ো বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিম ও বাচ্চা দেয়া শুরু করে। এখন প্রতিটি বাসায় কেউ ডিম পাড়ছে আবার কেউ ডিমের তা দিচ্ছে।  আবার কেউ কেউ তাদের বাচ্চাদের পালন পালন করছে। মাত্র ৬ মাস বয়সের এ কবুতর খামারটি থেকে উৎপাদিত কবুতর বাচ্চা একাধারে বিক্রি করছি। খামারটিতে বর্তমান ছেটবড় ও বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার পায়রা রয়েছে। স্থানীয় ফড়িয়ারা ১০/১৫ দিনের বাচ্চা ১শ’ টাকা জোড়া হিসেবে এখান থেকেই কিনে নিয়ে যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে এ খামারটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিচ্ছেন। পিতার দেয়া পরামর্শ প্রাণিসম্পদ বিভাগের তদারকি আর আমার পরিশ্রম আজ আমাকে কবুতর পালন করে বেকারাত্ব দূর করে দিয়েছে। আজ আমি কবুতর পালন করে নতুন দুয়ারের সন্ধান পেয়ে স্বাবলম্বী।

নাপিতখালী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, পায়রা বা কবুতরের খামার আশপাশের কোনো গ্রামেই নেই। তবে অনেকেই শখ করে বাড়িতে উন্মুক্ত স্থানে পায়রা পোষে। ইকবাল এ গ্রামে কবুতর খামার করার কারণে প্রতিদিন কেউ না কেউ তার কাছে আসে। তিনি আরো বলেন, নতুনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা চলার পথে প্রেরণা যোগায়। যারা চলার পথের অন্ধকারকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তারাই নতুন পথের সন্ধান পায়। সমাজের ভীরু কাপুরুষেরা ভয় দোখিয়ে তাদেরকে নিরস্ত করতে চায়। এরা সব সময় হতাশার কথা বলে। কিন্তু যারা প্রকৃত কর্মঠ তারা ভীত না হয়ে এগিয়ে যেয়ে সম্ভবনার নতুন পথের দেখা পায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. শামিমুজ্জামান বলেন, কবুতর একটি পোষ্যপ্রাণি। সাধারণত বাড়িতে কাঠের খোপের অবকাঠমো তৈরি করে কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। তবে কেউ ইচ্ছা করলে ব্যবসায়ীভাবে খামার করে পালন করতে পারে। কবুতরের রোগবালাই কম এবং লাভজনক। বার মাসে তের জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। নাপিতখালীর ইকবালের মতো কেউ কবুতর খামার করে পালন করতে চাইলে তাকেও সার্বিক সহযোগিতা করা যেতে পারে।