দামুড়হুদার কুতুবপুর গ্রামটি এখন চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র

কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে শ শ নারী-পুরুষের
শরিফ রতন: দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের গ্রাম হিসেবে খ্যাত কুতুবপুর গ্রামটি এখন চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। যার ফলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে শ শ নারী-পুরুষের।
জানা গেছে, নারীদের মাথা থেকে ঝরে পড়া চুল দিয়ে চুলের ক্যাপ, খোপাসহ তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের জিনিস। যার বাজার মূল্য খুব বেশি। ফলে নারীদের মাথার চুল এখন আর ফেলে দেয়ার জিনিস নয়। চীন ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি চুল বিক্রি হচ্ছে ১৭ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব চুল প্রক্রিয়াজাত করে চীন ও কোরিয়াসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তাই কুতুবপুর হয়ে কার্পাসডাঙ্গা থেকে চুল কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠায় চুল ব্যবসায়ীরা। পরে তা যায় চীন-কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। দেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ফেরি করে চুল কিনে কুতুবপুর গ্রামে বিক্রি করে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। পরে মেশিন দিয়ে শাট বা সাইজ করে পাঠানো হচ্ছে চীন-কোরিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে।
বাংলাদেশ হেয়ার প্রসেসিং সমবায় সমিতির সভাপতি হাসিবুজ্জামান শহিদ বিশ্বাস জানান, এক সময় নারীরা তাদের মাথার চুল আঁচরিয়ে ফেলে দিতো। কিন্তু তখন কি তারা ভেবেছে এই ফেলে দেয়া চুল এক সময় বিদেশে রপ্তাানি হবে, মূল্যবান হবে তাদের ফেলে দেয়া চুল! এ ফেলে দেয়া চুলকে ঘিরেই সীমান্ত এলাকা কুতুবপুরে গড়ে উঠেছে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান। গ্রাম থেকে চুল কিনে নিয়ে ফেরিওয়ালারা চুল বিক্রি করে কুতুবপুর গ্রামের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানে। গ্রামের বেশকিছু ব্যবসায়ী এই ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছে। তাদের মাধ্যমে শ শ বেকার যুবক, যুবতী, নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রকার ভেদে কারও বেতন মাসে ৬ হাজার আবার কারো বেতন ৮ হাজার, কারো বেতন ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
হকার মহির উদ্দিন জানান, তারা দেশের বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে নগদ টাকা ও খাবারসহ বিভিন্ন রকম জিনিস দিয়ে গ্রামের নারীদের কাছ থেকে চুল সংগ্রহ করে। তখন এসব চুল থাকে অগোছালে। এ চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে বিক্রি করি। প্রথম দিকে এ চুল কম দামে ক্রয় করতাম। কিন্তু এখন চুল আর কেউ ফেলে না। গ্রাম থেকে এ চুল কিনতে হচ্ছে চার থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে। আর তা বিক্রি করি দুই তিন হাজার টাকা লাভে। আগে চেয়ে চুলে এখন লাভ কম। কুতুবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. মিজান জানান, হকাররা বিভিন্ন এলাকা থেকে চুল সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। এর মধ্যে নারীদের মাথার কালো চুল তারা কেনেন। এরপর অগোছালো চুল মেশিন দিয়ে শাট বা সাইজ করা হয়। বাছাই কাজে সাধারণত নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম চুল বাছাইয়ের জন্য তাদের দেয়া হয় ৭ ঘণ্টায় ৭৫ টাকা করে। স্থানীয় শ শ নারী এ কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন বলে তিনি জানান।