দর্শনা কেরুজ ফুরশেদপুর বাণিজ্যিক খামারে চলছে হরিলুট : সবকিছুই চলছে ভাগবাটোয়ারা করে

 

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ফুরশেদপুর বাণিজ্যিক খামারের সুপারভাইজার আলী মিয়া ও চুক্তিভিত্তিক পাহারাদার নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে রাম রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ উঠেছে। সাপ্তাহিক বিলে অতিক্তি লেবার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, লিজ না নিয়ে প্রায় ২ একর জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ঝাল বেগুনসহ সবজি চাষ, ঠিকমতো চাষাবাদ না করে তেল বিক্রির ভাগ, পাবলিকের শ্যালোমেশিন চালিয়ে সুবিধা নেয়াসহ হরিলুট হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। খামারের অফিসে বসে আলী এবং নাজিম মদ্যপান করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আর এতোসব হচ্ছে দেখভাল করা কর্তাবাবুদের ম্যানেজ করে এমন অভিযোগও অনেকের।

দর্শনা চিনিকলের অধীনে রয়েছে আখ উৎপাদনের জন্য ৯টি বাণিজ্যিক খামার। এসব খামারে আখ উৎপাদন করতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতি বছর গুনতে হয় মোটা অংকের লোকসান। তারপরও চিনিকলটিকে টিকিয়ে রাখতে লোকসান দিয়েও আখ উৎপাদন করে থাকে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। লোকসানের বোঝা তখনই ভারী হয় যখন কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নিজের পকেট ভারী করতে করেন দুর্নীতি। তেমনি একটি বাণিজ্যিক খামার ফুরশেদপুর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই খামারের বেশ কিছু দিন হাজিরা শ্রমিক অভিযোগ করে জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঁঝরি গ্রামের আলী মিয়া ফুরশেদপুর বাণিজ্যিক খামারের সুপারভাইজার ও বেগমপুর হাটপাড়ার নাজিম উদ্দীন চুক্তিভিত্তিক পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিজেদের কর্মস্থলটি বাড়ির কাছে হওয়ায় খামারের আসেন আর যান নিজের খেয়াল খুশিমতো। নিজের পছন্দ মতো দিন হাজিরা শ্রমিককে কাগজে-কলমে কাজ দেখানো হচ্ছে। নামে-বেনামে উত্তোলন করছেন হাজিরা। বিলের আগের দিন খাতাকলম ঠিক করে নামে বেনামে হাজিরা দেখিয়ে বিল তৈরি করে পাঠান প্রধান কার্যালয়ে। আর এসব বিলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন মিলের ফার্ম ম্যানেজার আব্দুর বারী। অভিযোগকারীরা বলেন, নাজিম চুক্তিভিত্তিক পাহারাদার হলেও তার ছেলে নাবালক সোহাগের নামে ওঠে নিয়মিত টাকা। আর এ সমস্ত অর্থলোপাটের কাজটি করা হয় বিশ্বস্ত শ্রমিক দিয়ে। দীর্ঘদিন একই ফার্মে থাকার সুবাদে তারা দুজন নানা অনিয়ম করলেও কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারে না। পাহারাদার নাজিম খামারের আইকে ব্লকে প্রায় ২ একর জমি ভরাট করার অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝাল বেগুনসহ নানা সবজির চাষ করে হাজার হাজার টাকা নিজের পকেটে ভরলেও চিনিকল কর্তৃপক্ষকে কোনো লিজের টাকা দেয় না। খামারের যখন মরসুমে চাষাবাদ হয় তখন ট্রাক্টর চালকদের নিকট থেকে সুপারভাইজার আলী ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়ায় ড্রাইভাররা দায়সারা চাষ করে থাকে। চারা আখ ভেজানোর জন্য পাবলিকের শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ কাজ করিয়ে সেখান থেকেও একটি সুবিধা নিয়ে থাকেন আলী। সন্ধ্যার পর আলী ও নাজিম খামারের অফিসে বসে মদ্যপান করেন বলেও অভিযোগ অনেকের। দীর্ঘদিন একই খামারে থাকার কারণে এতোসব করে থাকেন বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। এসব বিষয়ে অনেকেই ফার্ম ম্যানেজার আব্দুল বারীর নিকট মৌখিকভাবে জানালেও তিনি অজ্ঞাত কারণে সবকিছু এড়িয়ে গেছেন।

এদিকে চিনিকল প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা হালকা করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাত-দিন নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গলেও কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতি বছর গুনতে হচ্ছে বাড়তি লোকসান। বিষয়টি খতিয়ে দেখে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন তড়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।