তৈরি হচ্ছে মন বোঝার যন্ত্র

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মনে মনে কী ভাবছেন, তা ধরা পড়বে যন্ত্রে। মানুষের মন বোঝার এই যন্ত্রতৈরি করেছেন বিজ্ঞানী জ্যাক গ্যালান্ট। আপনার চিন্তা ডিকোডিং করে তা বলেদিতে পারবেন তিনি। অর্থাৎ, মনের কথা পড়তে পারেন এই বিজ্ঞানী। এটা তিনিপারেন শুধু তাঁর যন্ত্রের সাহায্যে।জ্যাকের তৈরি যন্ত্রে থাকা মুভি দেখলে মস্তিষ্কে যে ছবি তৈরি হয়, তারকোড বিশ্লেষণ করতে পারেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের গবেষক জ্যাকগ্যালান্ট। গ্যালান্টের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ব্যক্তিকে প্রথমে ওই যন্ত্রেরসাহায্যে একটি মুভি দেখানো হয়। এ সময় তার মস্তিষ্কে যাওয়া সংকেতগুলোপরিমাপ করতে থাকেন একদল গবেষক। এরপর মস্তিষ্কের সেই ঝাপসা, কম্পোজিটছবিগুলোকে একটি বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে পুনর্নিমাণ করা হয়। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি কোনো কিছু দেখার পর মস্তিষ্কে যে সংকেত যায়, সেগুলো মেপে তামুভিতে রূপান্তর করা হয়।জ্যাক গ্যালান্ট অবশ্য ব্রেইন ডিকোডার তৈরিকরতে চান না। তার গবেষণা মূলত কীভাবে ভিজ্যুয়াল সিস্টেম কাজ করে, বিষয়টিদেখা এবং মস্তিষ্ক কীভাবে ভিজ্যুয়াল তথ্য ধারণ করে, তার মডেল তৈরি করা।এ ক্ষেত্রে ব্রেইন রিডারকে আলাদা একটি প্রকল্প বলে মনে করেন তিনি।গ্যালান্ট বলেন, ‘আপনি যদি মস্তিষ্ক কীভাবে ছবি ধারণ করে, তার খুব ভালোমডেল তৈরি করতে পারেন, তারপর সেটা থেকে সেরা ডিকোডার বানানো যায়।’ তবেএটাকে কোনো বিজ্ঞান মানতে নারাজ তিনি।বিজ্ঞান হোক বা না হোক অনেকেইআশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে চিন্তা ধরার এই যন্ত্র সরকারিভাবে ব্যবহার করা হবেএবং মানুষের চিন্তা কবজা করা হবে।গ্যালান্ট অবশ্য বলছেন, এ ধরনেরযন্ত্র নিয়ে ভয়ের কারণ থাকলেও এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মস্তিষ্ক পড়ার জন্যএ ধরনের যন্ত্র তৈরিতে যে দুটি মূল বাধা রয়েছে তা দূর করতে ৫০ বছর লেগেযাবে। এই বাধা দুটি হচ্ছে পোর্টাবিলিটি বা বহনযোগ্যতা ও মস্তিষ্ক সংকেতেরশক্তি।বর্তমানে মস্তিষ্কের সংকেত পড়তে এমআরআই যন্ত্র ব্যবহার করাহয়। এমআরআই যন্ত্র মস্তিষ্কের কার্যবিধি দেখার সেরা উপায় হলেও এটাপূর্ণাঙ্গ বা সহজে বহনযোগ্য নয়। এমআরআই মেশিনের ‘সাবজেক্ট’ সহজে নড়াচড়াকরতে পারে না। ব্যয়বহুল এ যন্ত্রটির আকারও বিশাল।

এদিকে মস্তিষ্কের ছবি ও চলচ্চিত্রের ছবির তুলনা করলে দেখা যায়, ছবিরমানের দিক থেকেও যথেষ্ট পার্থক্য থাকে। এমআরআই স্ক্যানে যে ছবি তোলা হয়তাতে ঝকঝকে ছবি পাওয়ার মতো রেজুলেশন থাকে না। তাই গ্যালান্টের মতে, যতো দিননা মস্তিষ্ক কার্যকলাপ ধরার উন্নত যন্ত্র তৈরি করা যায়, ততোদিন পর্যন্তসাধারণ ব্যবহারের উপযোগী মস্তিষ্ক ডিকোডিং মেশিন তৈরি সম্ভব নয়।

স্বপ্ন ধরার যন্ত্র: গ্যালান্ট মস্তিষ্কের কোনোডিকোডিং মেশিন তৈরিতে কাজ না করলেও অন্যেরা বসে নেই। সম্প্রতি জাপানেরগবেষকেরা স্বপ্ন ধরার যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছেন। গবেষকেরা এ কাজে ব্যবহারকরছেন এফএমআরআই নামের একটি পদ্ধতি।স্বপ্নের ঘটনা অনেকের মনে থাকে, অনেকের থাকে না। কারও মনে পড়ে অস্পষ্ট। গবেষকেরা দাবি করেন মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ধরা যাবে স্বপ্ন।গবেষকেরা বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে একটি ভিজ্যুয়াল ইমেজারি ডিকোডারতৈরি করেন। গবেষকেরা জানান, তারা মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ঘুমন্ত অবস্থায় তারকার্যকলাপ ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এটি অবশ্যই একটি বড় সফলতা।গবেষক গ্যালান্টের মতে, স্বপ্ন ধরার সেরা যন্ত্রটি তৈরি করতে হলেপ্রয়োজন হবে মানুষের মনের কথাগুলো ডিকোড করা। এমন কোনো যন্ত্র তৈরি করা যামানুষের মনের কথাকে ব্যবহারিক রূপ দেবে। তারপর মন থেকে চাইলের গাড়ির মতোযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়া যাবে।