তিন শিশু পুড়িয়ে হত্যা : ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: শোক আর বেদনাদায়ক পরিবেশের মধ্যদিয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরে আগুনে পুড়ে নিহত ৩ শিশুর দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শৈলকুপা শহরের চৌরাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানববন্ধন থেকে শৈলকুপা উপজেলা উদিচি সভাপতি কেএম শরিফসহ বিভিন্ন নের্তৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধন থেকে বক্তারা ঘাতক ইকবালকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান।
অপরদিকে নিহত শিশু মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের বাবা স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে বাদীর বড় ভাই ইকবাল হোসেন। শৈলকুপা থানার সেকেন্ড অফিসার জানান, স্বজনরা লাশের ময়নাতদন্ত ও দাফনের কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি নিজেই মামলাটি তদন্ত করবেন বলে জানান।
বাদীর লেখা এজাহারের উদ্বৃতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক এমদাদ হোসেন জানান, রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসামি ইকবাল হোসেন পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার ভাইয়ের দু শিশুসন্তান মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিন এবং বোনের ছেলে মাহিনকে মারধর করে খাটের সাথে বেধে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সাফিন ও আমিন ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরণ করে। হাসপাতালে ভর্তির পর মাহিন মারা যায়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো টাকা খরচ করে ফেলার কারণে ইকবাল তার পিতা ও ভাইয়ের ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলো। এছাড়া নিয়মিতো ইকবাল নেশা করতো। ইকবালের স্ত্রীর ইচ্ছা ছিলো তার স্বামী আলাদা বাড়ি করবে। কিন্তু একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় তাও সম্ভব হয়নি। মূলত পারিবারিক অশান্তি ও নেশার কারণে ইকবাল এই নৃশংস কাজে লিপ্ত হয় এমন ধারনাও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ মনে করছে। গতকাল সোমবার মাগরিবের নামাজের আগেই পারিবারিক গোরস্থানে ৩ শিশুর দাফন সম্পন্ন করে তাদের স্বজনরা। সোমবার বিকেলে আগুনে পুড়ে নিহত ৩ শিশু সাফিন, ছোট ভাই মোস্তফা আমিন ও ফুফাত ভাই মাহিমের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছুলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশবাহী গাড়ি দেখে স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। মহল্লা জুড়ে খেলা করে বেড়ানো শিশুরা আজ লাশ হয়ে পিতার কাঁধে উঠেছে এমন ভাবতে তাদের গা শিউরে ওঠেছে।
এদিকে ৩ শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে মানুষ। সোমবার দুপুরে শৈলকুপার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে কয়েকশ মানুষ ঘাতকের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে ৩ শিশুর ঘাতক ইকবাল হোসেনের ফাঁসির দাবি জানান। শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক জানান, এ উপলক্ষে এলাকাবাসীর পক্ষে শৈলকুপা প্রেসক্লাব, দোকান ও বাজার মালিক সমিতি এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে শৈলকুপা চৌরাস্তার মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে শৈলকুপা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহিন আক্তার পলাশ, ইবির ট্রেজারার শামছুজ্জামান জোহা, এলাকার কাউন্সিলর শওকত আলী ও বাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় পারিবারিক কলহের জের ধরে কবিরপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে মোস্তফা সাফিন (৯) ও মোস্তফা আমিন (৭) এবং ভাগ্নে মাহিমকে (১২) ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়।