ট্রাক-পিকাপ আটকে অস্ত্রেরমুখে জিম্মি করে টাকাসহ মূল্যবান মালামাল ডাকাতি

ঝিনাইদহের বাজার গোপালপুরডাকবাংলা সড়কের বাবলাতলায় গাছ ফেলে ডাকাতদলের দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক ঘটেইে চলেছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা। গত এক সপ্তাহে দুটি সড়কে ছিনতাই, দু কৃষকের বাড়িতে ডাকাতি ও দুষ্কৃতিকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুজন রক্তাক্ত জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দিনগত রাতেও বাজার গোপালপুর-ডাকবাংলা সড়কের বাবলাতলা নামক স্থানে একদল অস্ত্রধারী ডাকাতদল দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে। ডাকাতদল সড়কে একাধিক গাছ ফেলে কয়েকটি পিকাপ, ট্রাক আরোহী ধারালো অস্ত্রের মুখে ডাকাতির শিকার হয়েছেন। ডাকাতদল তাদের নিকট থেকে নগদ অর্থ মূল্যবান জিনিসসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল হাতিয়ে নিয়েছেন। এসকল আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বাজার গোপালপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থান একটি টর্চ লাইট, একটি হেঁসো, একটি মোবাইলফোন ও ৪টি মোবাইল ছিমকার্ড উদ্ধার কার হয়েছে। মাঠে কর্মরত কৃষকরা এসকল জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বাজার গোপালপুর পুলিশ ক্যাম্প ঘটনা স্থলে গিয়ে জিনিসগুলো উদ্ধার করে।

পুলিশ জানান, অপরাধিরা অপরাধীরা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে এসকল জিনিস ফেলে রেখে গেছে। যা তদন্ত করলে প্রকৃক ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তবে একের পর এক চুরি ডাকাতি আর ছিনতাইয়ের ঘটনায় সন্ধ্যার পরই সাধারণ নিরিহ গ্রামবাসীর মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গত মঙ্গলবার দিনগত রাতের বাজার গোপালপুর-ডাকবাংলা সড়কের বাবলাতলায় ডাকাতির বর্ণনা করতে গিয়ে ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতির ট্রাক ড্রাইভার রোকনুজ্জামান বলেন, বাজার গোপালপুর গ্রামের আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঘটনাদিন রাতে পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিল ছিলো। আমার নিকট জনদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলাম। ভোরে একটা ভাড়া থাকায় মিলাদ শেষে পরিবারের লোকজন নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়ে বাজার গোপালপুর-ডাকবাংলা সড়কের বাবলাতলা নামকে স্থানে পৌঁছুতেই দেখি রাস্তায় কয়েকটি গাছ পড়ে আছে এবং একটি ট্রাক ঠেকানো। তখন রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টা হবে। ঘটনা স্থলে পৌঁছুতেই ৮-৯ জন লোক আমার গাড়ির দিকে ছুটে আসলো এবং ধারালো আস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা মোবাইলফোন নিয়ে কোনো কথা না বলে গাড়িতে বসে থাকতে বলে শাসিয়ে যায়। এইভাবে একে একে ৩টি পিকাপ আসলো একইভাবে তাদেরকে জিম্মি করে সোনার গয়না, নগত অর্থসহ দামি মালামাল ডাকাতি করে নেয়। তিনি আক্ষেপ করে আরও জানান, রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোরের আযানের আগ পর্যন্ত ডাকাত দলের তাণ্ডব চললেও কোনো পুলিশি টহলদল দেখতে পাননি। নিকটজনদের কাছে ফোন করে তারা ক্যাম্প পুলিশকে সাথে নিয়ে এসে রাস্তার গাছ সরালে আমরা যেতে পারি।

গ্রামবাসী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানায়, গত এক সপ্তাহে দুটি সড়কে ছিনতাই, দু কৃষকের বাড়িতে ডাকাতি ও দুষ্ককৃতিকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুজন রক্তাক্ত জখমের ঘটনা ঘটেছে। খোঁজনিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার ইউনিয়নের নবাই সন্যাসির মন্দিরে নামযজ্ঞ শুনে বাড়িতে ফেরার পথে বাজার গোপালপুর-আটলিয়া সড়কের বালুর মাঠে ছিনাতাইয়ের কবলে পড়েন ফাজিলপুর গ্রামের ১১ জনসহ গান্না, রামনগর এবং সলেমানপুরের নবাই ভক্তরা। ছিনতাইয়ের শিকার ফাজিলপুরের ঝড়ুপাল ও দ্বিপল সাহা জানান, তারা সোনার গয়না ও নগদ অর্থসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল খুইয়েছেন।

এদিকে গত রোববার দিনগত মধ্যরাতে চান্দুয়ালি গ্রামের মাঠপাড়ায় একদল সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হানা দেয়। তারা হাকিম আলীর ছেলে সামসুল হক এবং পরে আছমত আলীর ছেলে আলী আহম্মদের বাড়িতে প্রবেশ করে ধারালো আস্ত্রের মুখে গৃহকর্তাদেরকে জিম্মি করে সোনার গয়না নগদ অর্থসহ দামি মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। দুই গৃহকর্তা আরও জানান, আমাদের বাড়িতে প্রতি বছরই প্রায় ২-৩ বার ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৮মাস আগে পাশের আজিবর রহমান ও আব্দুল আলিমের বাড়েতে ডাকাতি হয়। এর দীর্ঘ দিন পর আবার আমাদের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

অপরদিকে ১৫ মে দিনগত রাতে কুবিরখালী গ্রামের মাঠে তাস খেলায় হামলা করে অঞ্জাত দুষ্কৃতিকারীরা এবং ঝিনাইদহে গরসুতি গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মহিদুল ইসলাম এবং বাজার গোপালপুর গ্রামের ইচাহক আলীর ছেলে সাব্দার আলিকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনা স্থলে যায় এবং তাদের দুজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের একের পর এক চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মত ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত অপরাধীরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে একের পর এক চুরি ডাকাতি আর ছিনতাইয়ের ঘটনায় সন্ধ্যার পরই সাধারণ নিরীহ গ্রামবাসীর মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।