ঝিনাইদহে শাকসবজির বাজার মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দখলে : ক্রেতাদের মাঝে হতাশা

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হলেও খুচরা বাজারে দাম দ্বিগুণ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হাটবাজারগুলোতে শীতকালীন শাকসবজির বাজার মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দখলে চলে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার অধিক আবাদ হলেও চাষিরা যেমন উৎপাদিত শাকসবজির ভালো দাম পাচ্ছে না। তেমনি ভোক্তাগণও দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। দামে ক্রেতারা চরম হতাশ হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চল হাটবাজরগুলোতে শাকসবজির দাম যেনো একাবারে আকাশ ছোঁয়া। তাই ক্রেতার প্রয়োজনের কারনেই বেশি দাম দিয়ে শাকসবজি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি শীত মরসুমে ১০ হাজার ৬শ’ ৯৩ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আর কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হেক্টর জমিতে বেশি সবজির আবাদ করেছেন। অর্থাৎ চলতি মরসুমে ১০ হাজার ৭শ’ ৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। যেখানে ঝিনাইদহে ১৭শ’ ৭৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৭শ’ ৮০ হেক্টর, কোটচাঁদপুুরে ১ হাজার ৩০ হেক্টর, মহেশপুরে ২ হাজার ৮০ হেক্টর ও শৈলকুপা উপজেলায় ২৮শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সবজির আবাদ করছেন। চলতি শীত মরসুমে জেলার শৈলকুপায় সবচেয়ে বেশি এবং কোটচাঁদপুুর উপজেলায় কম সবজির আবাদ হয়েছে। আর এ পরিমাণ সবজির ক্ষেত থেকে ১৭.৮৩ বা প্রায় ১৮ মেট্টিক টন সবজির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সদর উপজেলার বেড়াশুলা গ্রামের ফুলকপি চাষি আব্দুল ওহাব জানান, তিনি এবার প্রায় একবিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছিলেন। সেখানে প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ করেছিলাম। বিক্রি করেছিলাম সাড়ে ১৪ হাজার টাকা আর যিনি কিনে শহরের একজনের নিকট বিক্রি করলেন প্রায় ৩২ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, চাষিরা সবজি আবাদ করলেও তারা বাজারে ভালোদাম খুব কম সময়ই পেয়ে থাকেন। জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষীকু-ু গ্রামের শাকসবজি চাষি জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিবছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে শাকসবজির আবাদ করেন। কিন্তু দু’দফা বৃষ্টিতে তার সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি সে জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন।
জেলার ডাকবাংলা, হলিধানি, নগরবাথান, সাবদারপুর, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের কাচাবাজরে শাকসবজির দাম বৃদ্ধিতে বিক্রি হচ্ছে। হাটবাজারগুলোতে ২০ টাকার শিম ৪০ টাকা, ৩০ টাকার মেটে আলু ৬০ টাকা, ২৫ টাকার মানকচু ৫০ টাকা, ১২ টাকার ফুলকপি ৩০ টাকা, ২০ টাকার টমেটো ৪০ টাকা, ১২ টাকার বরবটি ৩০ টাকা, ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, ২০ টাকার পুইশাকের মেছড়ি ৫০ টাকা, ১৫ টাকার গোল আলু ২৫ টাকা, ২০ টাকার বেগুন ৫০ টাকা, ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল সদরের নগরবাথান বাজারে সবজি বিক্রেতা আলতাফ ও বাবলু হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, চাষিদের নিকট থেকে বেশি দামে শাকসবজি কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের পরিবহন খরচ, বাজারে বিক্রিও জন্য বসার জায়গায় আলাদা খরচ দিতে হয়। তাছাড়া ২-৫ টাকা লাভ করতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। ঝিনাইদহ সদরের বাজার গোপালপুরে শাকসবজি কিনতে আসা আনিচুর রহমান জানান, বাজারে এতো শাকসবজি তার পরও দাম কম নয়। প্রয়োজন তাই বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে। মহেশপুরের ভ্যানচালক আব্দুল করিম বলেন, সারাদিন পরিশ্রম করে যে পরিমাণ আয় হচ্ছে তার বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে কাঁচাবাজার কিনতে। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ^াস বলেন, বৃষ্টির কারণে কৃষকরা সঠিক সময়ে শাকসবজি আবাদ করতে পারেনি এবং শৈত্যপ্রবাহ ও শীতের কারণে শাকসবজি দ্রুত বড় হচ্ছে না। তাই চাহিদা বেশি থাকার জন্য দামও এবার একটু বেশি।