ঝিনাইদহে জায়ান্ট মিলিবাগপোকার সন্ধান : গরমে দ্রুত বংশবৃদ্ধি হচ্ছে

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: দেশব্যাপি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী আফ্রিকান পোকা জায়ান্ট মিলিবাগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা শহরের পশু হাসপাতাল পাড়ায় পোকাটি আবিস্কার করেন। বর্তমানে এ পোকা আবিস্কারের ঘটনাটি নিয়ে ঝিনাইদহে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমের কারণে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে আরও ছড়ানোর আশঙ্কা থাকায় পোকাটিকে এখনই দমন করতে হবে। পোকাটি ফলদ ও কাঠজাতীয় উদ্ভিদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। তবে সংবেদনশীল ত্বকের মানুষের শরীরে লাগলে এটি চুলকানির কারণ হতে পারে।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, শহরের পশু হাসপাতাল পাড়ায় সাংবাদিক এম হাসান মূসার বাগানে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকাটি দেখা যায়। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, এ পোকাটিই আফ্রিকান জায়ান্ট মিলিবাগ। শৈলকুপার কৃষি বিভাগের একটি টিম সাংবাদিক মুসার বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পোকাটি জায়ান্ট মিলিবাগ বলে নিশ্চিত হন। কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, পোকাটির শরীরে ডায়াজিনন ৬০ ইসি, রিপকড ও সপসিন জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করেও মৃত্যু নিশ্চত করা সম্ভব হয়নি। তবে পানি ছাড়া সরাসরি বিষ প্রয়োগের ফলে পোকাটি মারা যাচ্ছে। টপসিন নামে একটি কীটনাশক এ পোকা দমকে কার্যকারী ভূমিকা রাখলেও তা ফসলের জন্য ক্ষতিকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।শৈলকুপা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাসান মুসা জানান, গত বছর থেকে তার বাগান বাড়িতে জায়ান্ট মিলিবাগ পোকাটি দেখা যায়। এ বছর বংশ বিস্তার করে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তিনি আরো জানান, তার বাগানে থাকা কাঠাল, আম, পোয়ারা, বাতাবি লেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে এ পোকা ছড়িয়ে ফলমুল সাবাড় করে দিচ্ছে। পোকাটির শরীরে মোম জাতীয় পদার্থ থাকায় কোনো কীটনাশকে মরছে না।কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাংবাদিক মুসার বাড়িটি জঙ্গলে ঘেরা। পোকার বংশ বৃদ্ধি ও বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ সেখানে বিরাজমান। উচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রায় জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা দ্রুত বংশবিস্তার করে। গাছের নিচে পোকার শরীর থেকে নির্গত রস পড়ে আছে। এ রস মানুষের শরীরে পড়লে চুলকানি ও এলার্জি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উদ্ভিদভোজী জায়ান্ট মিলিবাগ আফ্রিকা মহাদেশের পোকা। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তা থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মাটির নিচে থাকা ডিম থেকে বের হয়ে গাছে ওঠে। মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন গাছের রস খেয়ে বড় হয়। এরপর পোকাগুলো ডিম পাড়ার জন্য আবার মাটিতে ফিরে আসে। সাধারণত ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার মাটির নিচে প্রতিটি জায়ান্ট মিলিবাগ ২০০ থেকে ৪০০ টি করে ডিম পাড়ে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন জানান, শৈলকুপায় পাওয়া পোকাটি জায়ান্ট মিলিবাগ। পোকাটি দমনের জন্য কার্যকর কীটনাশক খোঁজা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, পোকাটি দমনের কার্যকর ওষুধ সনাক্ত করার পর জেলাব্যাপী জায়ান্ট মিলিবাগ পোকাটির ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে প্রচারণা চালানো হবে।অপরদিকে কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পোকা ফসল, গাছের পাতা ও ছাল খেয়ে জীবনধারণ করে। ফলে অচিরেই গাছ মারা যায়। তাছাড়া দলে দলে এ পোকা ফসলের মাঠে আক্রমণ করলে ২/১দিনের মধ্যে মাছের যে কোনো ফসলের মাঠ তসরুপ হয়ে যেতে পারে। এদিকে গবেষকেরা বলছেন, এ পোকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এটি গাছের কচি পাতা, ফুলের কুঁড়ি, ফল ইত্যাদি খায়। এ কারণে আক্রান্ত গাছ নিস্তেজ হয়ে মারা যেতে পারে।