ঝিনাইদহে এবার এমপি হত্যা ষড়যন্ত্র মামলায় আ.লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ২

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আবু সাঈদ ও সরকারি কর্মচারী কাওছার আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা এমপি আনার হত্যার ষড়যন্ত্র করছিলো বলেও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ সব তথ্য জানান এমপিকে হত্যা প্রচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই ইমরান আলম। তিনি জানান, বুধবার কালীগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েক জনকে আসামি করা হয়।

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ মামলাটি দ্রুত রেকর্ড করে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন। বুধবার বিকেলে সাদা পোশাকের অস্ত্রধারীরা হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসে হানা দিয়ে সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলীকে তুলে আনেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একজন কর্মচারীকে এভাবে পরিচয় গোপন করে আটক করতে পারেন কি-না তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়।

সরকারি ওই কর্মচারীকে আটকের সময় হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিনের অনুমতি নেয়া হয়নি। তার অফিস থেকেই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। এতে তিনি ক্ষুদ্ধ হন। পুলিশ প্রথমে অস্বীকার করলেও কর্মচারীদের আন্দোলনের হুমকীতে বুধবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় কাওছার তাদের হেফাজতে আছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসের সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলী ও নিয়ামতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদকে এমপি আনারকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই ইমরান আলম জানান, উপযুক্ত তথ্য প্রমানের ভিত্তিত্বে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানে কোনো বিতর্ক নেই। কালীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী আজম খান জানান, কাওছার আলী এমপিকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। আমরা প্রমান পেয়ে তাকে আটক করেছি। এদিকে গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদের ছোট ভাই হাসান অভিযোগ করেন গত ২৭ অক্টোবর কালীগঞ্জের সিঙ্গের বাজার থেকে থানার এসআই আব্দুল গাফ্ফার তার ভাইকে তুলে নিয়ে যান। এ ঘটনা বাজারের শ শ মানুষ দেখেছে। তিনি বলেন বিএনপির সময় তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা দেয়া হয়। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে টানানো ব্যানারে আজকের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে ফাঁসির যে দাবি করা হয়েছিলো সেই ব্যানারে তার ভাইয়ের ছবিও ছিলো। অথচ তাকে আজ এমপিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ফাঁসানো হলো। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালমুন্দিয়া গ্রাম থেকে জেহের আলী ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ নামে ২ ব্যক্তিকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কালীগঞ্জে নিখোঁজ থাকা জেহের আলীর মা জুলেখা বেগম অভিযোগ করেন তার ছেলেকে গত ২৫ অক্টোবর থানার এসআই সুকুমার তার ছেলেকে নিয়ে যান। সেই থেকে জেহের আলীকে পাওয়া যাচ্ছে না। কালীগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান আলম অবশ্য দাবি করেছেন জেহের আলী নামে তারা কাউকে আটক করেনি। এদিকে র‌্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবার অভিযোগ করেছেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা তাকে নিয়ে গেছেন। কোথাও তার হদিস মিলছে না। হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মাহাতাব হোসেন জানান, আজিজ নামে তারা কাউকে আটক করেননি।

এদিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসের সার্টিফিকেট সহকারী কাউছার আলীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি ঝিনাইদহ জেলা শাখার পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে তারা কাওছার আলীকে এভাবে অবৈধভাবে গ্রেফতারের প্রতিকার দাবি করেন।