ঝিনাইদহের হাটে-বাজারে হর হামেশা চলছে ভিক্ষাবৃত্তি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয় গত ৩ মাস আগে। ভিখারিদের স্বাবলম্বী করতে গরু, ছাগল, বাদাম ও মুরগিসহ বিভিন্ন রকমের উপকরণ বিতরণ করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দৃশ্যত এসব পদক্ষেপ তেমন কাজে আসেনি। আগের মতোই গ্রামে গঞ্জে, হাট-বাজারে ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে।
ভিখারিদের বক্তব্য, সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সুবিধা তারা পেয়েছেন তা দিয়ে পেট চালানো সম্ভব না। যে কারণে আমাদেরকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ভিখারিরা যাতে এই পেশা ছাড়তে পারেন, তার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা তাদের দেয়া হচ্ছে। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে নেয়া হচ্ছে নানা আয়োজন। তবে ঝিনাইদহ জেলাকে পুরোপুরি ভিখারিমুক্ত করতে সময় লাগবে বলে দাবি প্রাসনের। যদিও মাস তিনেক আগে জেলাকে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলা, শৈলকুপা, হরিণাকু-ু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা ও পৌর এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। ঝিনাইদহ জেলার দেড় হাজারের বেশি ভিখারিকে পুনর্বাসিত করতে উপজেলা পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা তৃণমূল জন প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে ভিখারিদের তালিকা তৈরি করেন। এরপর শুরু হয় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম। ‘ভিক্ষুক যাচাই-বাছাই কমিটি’ করে তাদের মধ্যে থেকে প্রকৃত ভিখারিদের তালিকা করা হয়। সেখানে ৬ উপজেলায় এক হাজারের বেশি ভিখারির ডাটাবেজ তৈরি করে উপজেলা প্রশাসন। আর ভিখারিদের পুনর্বাসন করতে ঝিনাইদহের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ১ দিনের বেতনের টাকা ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন ফান্ডে’ জমা দেন।
ভিখারিদের যাচাই-বাছাইয়ের সময় মতামত নেয়া হয় কে কী পেশায় নিয়োজিত হতে চান। তাদের পছন্দ মতো হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন, বাদাম বিক্রি, ওয়েট মেশিন, তাঁতের কাজ এবং ফেরি ব্যবসার উপকরণ আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হয়। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয় ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা তালিকা তৈরিতে ভিখারিদের অগ্রাধিকার দিতে। ইতোমধ্যে অনেক ভিখারিকে এই তালিকার আওতায় আনা হয়েছে। তার পরেও কিছু ভিখারিকে এখনো শহরে ও গ্রাম গঞ্জে ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, তারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। বেঁচে থাকতে তাই এখনো ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে যারা প্রশাসনের দেয়া সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তাদের ভাষ্য, ‘আমরা না পারছি ভিক্ষা করতে, না পারছি অন্য কাজ করতে। সরকার থেকে যে উপকরণ দেয়া হয়েছে তা একেবারেই কম। যা দিয়ে আয় করে বেঁচে থাকা অসম্ভব।’ তাদের মত, কেউ ইচ্ছা করে ভিক্ষা করে না। ভিক্ষা সবচেয়ে নিচু পেশা। নিজে আয় করে যতটুকু অর্জন হয় সেটাই অনেক ভালো।
এ সব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কালীগঞ্জের সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ভিখারিদের তালিকা করে ইতোমধ্যে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ভিখারিকে এখনো ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কাছে ঠিকানা জানতে চাইলে তারা বলে বাড়ি অন্য উপজেলায়। আসলে তাদের বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলাকে সম্পূর্ণভাবে ভিক্ষুকমুক্ত করতে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত পুনর্বাসিত ভিখারিদের কাউকে কাউকে ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করে ডিসি বলেন, ওরা শহরে এসে ভিক্ষা করছে। তবে তারা যদি ভিক্ষা বন্ধ না করে তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তালিকার বাইরে থাকা ভিখারিদের তালিকাভুক্ত করে পুনর্বাসন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসন।