ঝিনাইদহের হাটবাজারে ছাগলের পেটে গুড় লবণ মিশ্রিত পানি ঢুকিয়ে প্রতারণা

জাহিদুর রহমান তারিক: গম ও চাল ধানকলে ফেলে ময়লা আবর্জনা মুক্ত করতে বিশেষ ব্যবস্থায় হলার করার পদ্ধতিটি বহু পুরানো। কিন্তু ছাগল হলার করার কথাটি কেও শোনেনি। আশ্চার্য্য ও অবাক মনে হলেও ঝিনাইদহের হাটবাজারে হলার করা ছাগল বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ পদ্ধতিতে ছাগলের পেটে গুড় বা লবণ মিশ্রিত পানি মেশিনের সাহায্যে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে হাটে তোলা হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কতিপয় ছাগলের ব্যাপারী এ ব্যবস্থায় ছাগল বিক্রি করে চল্লেও তা আর মাংস বিক্রেতাদের নজর এড়ায়নি। প্রতারণার এই নতুন ফাঁদ দেখে ঝিনাইদহ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও হতবাক। অথচ এই ফাঁদে পড়ে মাংস বিক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ী ছামছুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনি গতহাটে দুইটি হৃষ্টপুষ্ট খাসি ছাগল কিনে বাড়িতে আনেন। ছাগল দুইটিতে ১২ কেজি করে ২৪ কেজি মাংস আন্দাজ করে কেনা হয়। বাড়ি আনার পর সারা রাত ধরেই প্রসাব পায়খানা করে জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায়। ঝিনাইদহের হাটে জবাই করে প্রতিটি ছাগলের মাংস হয় ৮ কেজি করে। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঝিনাইদহের মাংস বিক্রেতা সমিতির সভাপতি জয়নালও খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
দুলাল নামে এক ছাগল ব্যবসায়ী জানান, তিনি দীর্ঘদিন এই ব্যবসার সাথে জড়িত। সম্প্রতি হাট বাজারে হলার করা ছাগল কিনে তিনিও প্রতারিত হচ্ছেন। সাধুহাটী এলাকার গৃহবধূ লিলিমা বেগম জানান, তার মেজ দেবর দুইটি খাসি ছাগল কিনে আনেন কোরবানীর জন্য। পরদিন কথিত হৃষ্টপুষ্ট ফোলা সেই ছাগল রোগা আর জীর্ণ মনে হলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, হলার করা ছাগল নিয়ে ছাগল পালকরা খুবই বিপদে আছে। কারণ বাজার থেকে কিনে আনার পর কারো বুঝে উঠার ক্ষমতা নেই এটা হলার করা না গৃহস্থালীবাড়ির ছাগল। বেশ কিছু মাংস বিক্রেতারা জানান, ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে কালীগঞ্জের বারোবাজার। এই হাট ছাড়াও সদর উপজেলার গান্না, বৈডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ বাজার দশমাইল, বাজারগোপালপুর, ভাটই ও গোয়ালপাড়া হাটে অহরহ হলার করা ছাগল বিক্রি হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ছাগল মোটাতাজা করার বিষয়টি কারো ধারণাই আসে না এমন কথা জানালেন ঝিনাইদহ প্রাণিসম্পাদ বিভাগের কর্মকর্তাগণ। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি জানতে পেরে ঝিনাইদহের হাটে বাজারে নজরদারী বৃদ্ধি করেছেন। তিনি বলেন, শুধু ছাগলই নয় গরুও হলার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুরগীকে পাথর খাইয়ে ওজন বাড়ানোর কুমতলব থেকে এই ধারণাটি ছাগলের ব্যাপারীরা রপ্ত করেছে বলে মনে হয়।