ঝিনাইদহসহ জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষিরা মহাবিপাকে

মনজুর আলম: বোরো ধান রোপণের প্রকৃত সময় পার শেষ হতে চলেছে। ঝিনাইদহে এরই মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঝিনাইদহসহ গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত জমির কৃষকরা পানি না পেয়ে বোরো ধান রোপণ করতে পারেনি। ফলে ঝিনাইদহসহ জিকে সেচ আওতায় কয়েক লাখ হেক্টর জমির রোপা বোরো ধানের রোপণের শঙ্কা ও ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর এখনও বোরো ধান রোপণ করতে না পেরে মহাবিপাকে পড়তে যাচ্ছে কৃষকরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো রোপণের জন্য গত ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে পানি উত্তোলনের পাম্প চালু করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজির নির্দেশ ছিলো। কিন্তু নদী থেকে সেচ পাম্প পর্যন্ত পলি অপসারন, সেচ পাম্প মেরামতের ধীর গতির কারণে সঠিক সময়ে পানি দেয়া সম্ভব হয়নি। ভরা মরসুমেও পানির অভাবে কৃষকরা জমিতে ধান রোপণ করতে পারছেন না।
জানা গেছে, চলতি মরসুমে ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় ৮২ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ সীমান্তবর্তী কয়েক লাখ কৃষকের বোরো রোপণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জেলার হরিণাকু-ু উপজেলার জটারখাল গ্রামের কৃষক জহির হোসেন বলেন, আমরা এখনও পানির অভাবে বোরা ধান রোপণ করতে পারেনি। খুব অল্প সংখ্যক কৃষক স্যালোপানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করেছেন। ফলে অত্র এলাকায় কয়েক হাজার কৃষক জিকে খালের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কবে নাগাদ পানি আসবে সেটা নিয়েও চরম সংশয় প্রকাশ করছেন তারা। এ বছর সময় মতো ক্যানেলে পানি না পেয়ে বোরো ধান রোপণ করতে না পেরে মহাবিপাকে পড়তে যাচ্ছে কৃষকরা। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন কর্মকর্তার নিকট মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। তবে জেলার হরিণাকু-ু উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরশাদ আলী চৌধুরী জানান, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপা ধানের আবাদ করবেন কৃষকরা। কিন্তু এ বছর একটু সমস্যার কারণে আগাম পানি পাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, গত সোমবার খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সেচ পাম্পগুলো স্টার্ট করা হয়েছে। দ্রুতই ক্যানেলগুলোতে পানি চলে আসবে। আর আমাদের কৃষকরাও বোরো ধান রোপণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ^াস জানান, বোরো রোপা ধানের উৎকৃষ্ট ফলন পেতে জানুয়ারি মাসের মধ্যে রোপণ করা জরুরি। তবে জানুয়ারি মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে রোপণ শেষ করতে পারলে ভালো হয়। তিনি আরও জানান, দেরিতে চারা রোপণের ফলে বীজতলায় চারা বয়স্ক হয়ে যায়। এ চারা জমিতে রোপণ করলে রোগের ঝুঁকি থাকে। অপরিণত বয়সে ধান ক্ষেতে শীষ দেখা দেয়। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, কিন্তু ফলন কমে যায়। অন্যদিকে দেরিতে রোপণের ফলে ফসল মাঠ থেকে আনতে ঝড়, শিলাবৃষ্টির মতো অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগের সমস্যায় পড়তে হয়।