জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দুদুর বিবৃতির পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন সাধারণ সম্পাদক অনিক

 

মোমিন গ্রেফতারের প্রতিবাদে আহূত ছাত্রধর্মঘট প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার সুমনের পায়ের রগকাটা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতারকৃত আব্দুল মোমিন ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফ হোসেন দুদুর দেয়া বিবৃতির পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক ও দপ্তর সম্পাদক তানিম হাসান তারেক। একই সাথে তাদের আহূত স্কুল-কলেজের ধর্মঘট তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

যৌথভাবে স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছেন ‘চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকায় গ্রেফতারকৃত ছাত্রলীগ নেতা মোমিন জেলা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তার জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মোমিন চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন মেধাবী ছাত্র এবং শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শরীফ হোসেন দুদু দীর্ঘদিন যাবৎ সংগঠন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইতঃপূর্বে ছাত্রলীগ নেতা টুটুলকে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে, সেই হত্যার পেছনে ইন্ধনদাতা শরীফ হোসেন দুদু সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করেছে বলে অনেকেই মনে করে। এছাড়া ছাত্রলীগকে চুয়াডাঙ্গা জেলাব্যাপি একটি দুর্বল সংগঠন হিসেবে দাঁড় করার জন্য তার কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ? ছাত্রলীগ হলো আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন। কিন্তু শরীফ হোসেন দুদু জেলা আওয়ামী লীগকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ তাকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে অনেক পূর্বে মেনে না নেয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে। যেহেতু চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের  সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেই হিসেবে তার বর্তমান কর্মকাণ্ড বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইন্ধন দেয়ার শামিল। গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় সংসদ সদস্য জননেতা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে ভোট করার জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করেছে। এমনকি তার নিজের সেন্টারেও সে প্রকাশ্যে মশাল মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য কাজ করেছে, যা প্রমাণিত। এখানে আমাদের বক্তব্য হলো, প্রকৃত একজন ছাত্রলীগকর্মী মোমিনকে নিয়ে তার এ বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার (মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক) বক্তব্য হলো মোমিনকে গ্রেফতার করার পর ছাত্রনেতৃবৃন্দ জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। যা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একজন কর্মীর জন্য অবশ্যই করণীয়। আমি দুঃখের সাথে বলতে চাই একজন সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে শরীফ হোসেন দুদুর মতো একজন দলছুট ব্যক্তির এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদের সাথে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করি এবং সংসদ সদস্যের নির্দেশক্রমে ছাত্রদের লেখাপড়ায় যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য আগামীকাল (আজ) থেকে ছাত্রঘর্মঘট প্রত্যাহার করা হলো। এখন থেকে ছাত্রলীগের সকল ইউনিটকে শরীফ হোসেন দুদুর সকল কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।

প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকাধীন শান্তিপাড়ার রুহুল আমীনের ছেলে সুমনকে গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা কোর্টমোড়ের ঘাসফুল কম্পিউটারের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা) এলাকায়। সেখানে একদল যুবক তার ওপর নৃশংসতা চালায়। তার পায়ের রগ কেটে দেয় ওই যুবকেরা। তার কিডনিতেও ছুরিকাঘাত করা হয়। মোবাইলের মাধ্যমে খবর পেয়ে সুমনের পিতা রুহুল আমীন এসে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই রাতেই তাকে ঢাকায় রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনার পরদিন সুমনের পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারপাড়ার মুক্তার বিশ্বাসের ছেলে এ মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল মোমিনকে গত সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শিশুস্বর্গ পার্ক এলাকা থেকে সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর বিকেলে ছাত্রলীগের ব্যানারে চুয়াডাঙ্গা শহরে মাইকিং করা হয়। মাইকিং করে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ছাত্রধর্মঘট পালিত হবে। পরে গত ২১ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ হোসেন দুদু দৈনিক মাথাভাঙ্গায় একটি বিবৃতি দেন। গতকাল যা দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত মোমিন ছাত্রলীগের কেউ নয়।