জীবননগর সীমান্ত এখন সোনা পাচারের নিরাপদ রুট : গডফাদাররা অধরা

স্টাফ রিপোর্টার: ভারতে সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত পয়েন্টগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার ৩টি সিন্ডিকেটে সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ বছর ধরে এলাকার ৩টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটে এ রুট দিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি সোনা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করছে। প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেটে দির্ঘদিন ধরে ভারতে সোনা পাচার অব্যাহত রাখলেও সোনা পাচার বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসনের দুর্বল অভিযানের কারণে মাঝে মধ্যে দুই-একজন বহনকারী ধরা পড়লেও মূল হোতারা বরাবরই থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সোনা চোরাচালানের সাথে সরাসরি জড়িত গডফাদারদের শনাক্ত করতে শতভাগ ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার হচ্ছে শুধু সোনা বহনকারীরা। অভিযোগপত্রে থাকে শুধু বহনকারীদের নাম। এভাবেই মূল সোনা চোরাচালানকারীরা (গডফাদার) আড়ালে থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে সোনা চোরাচালান। এ চক্রের মূল হোতারা ধরা না পড়ায় সোনা পাচারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ১০টার দিকে অভিয়ান চালিয়ে রাকিব হোসেন নামে এক যুবককে ১ কেজি সাড়ে ৮শ’ গ্রাম সোনাসহ আটক করে। গ্রেফতারকৃত রাকিব হোসেন জানায়, সোনাগুলো ঢাকা থেকে জীবননগর রুট দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই সোনাগুলো উপজেলার শাপলাকলিপাড়ার হামিদ গাজী নামে এক সোনাপাচারকারী জীবননগর বাসস্ট্যান্ড থেকে রাকিব হোসেনের কাছে সোনাগুলো দিয়েছিলো ভারতে পৌঁছিয়ে দিতে। বিনিময়ে তাকে ১ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিলো। এর আগে গত বছর ১২ আগস্ট উপজেলার উথলী গ্রামের মোল্লাবাড়ি নামকস্থান থেকে বিজিবি সদস্যরা ৩ কেজি সোনাসহ ১ জনকে আটক করে। তার আগে জীবননগরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ্যকোচ জেআর পরিবহন কোটচাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে তল্ল¬াশি করে জসিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে ৮৪ ভরি সোনাসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত জসিম উদ্দীন পুলিশের কাছে জানায়, সে সোনাগুলো ঢাকা থেকে জীবননগর রুট দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছিলো। এর আগে একই মাসের ৪ তারিখে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ্যকোচ জেআর পরিবহন কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ ত¬ল্লাশি করে জীবননগরের চি‎ি‎হ্নত সোনা চোরাচালানি উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধাপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ওবায়দুল্লা ও সুনিল কর্মকারকে ১ কেজি ১৫০ গ্রাম সোনার বার ও চেইনসহ আটক করে। একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার উথলী গ্রামের সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য এনামুল, সেকেন্দার ও আজিবর ৩০টি সোনার বারসহ ঢাকা গাবতলিতে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়। তার আগে জীবননগর সীমান্তের বিপরীতে ভারতের মাঝদিয়ায় বিএসএফের হাতে ৩ কেজি সোনাসহ উপজেলার হরিরহনগর গ্রামের আব্দুল্ল¬া আটক হয়।
বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা সোনার বার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকজন কমিশনের বিনিময়ে বিমানবন্দর পার করে দেয়। এর পর ১০ তোলা ওজনের প্রতিটি সোনার বারের জন্য ২ হাজার টাকা কমিশন নিয়ে উপজেলার সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনযোগে জীবননগরে নিয়ে আসে। পরে সময় সুযোগ বুঝে সোনা চোরাকারবারিরা চোরাচালানিদের মাধ্যমে সোনার বারগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়। সমস্ত এ প্রক্রিয়াটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। অভিযোগ রয়েছে, জীবননগর উপজেলার রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ওই সব অবৈধ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ইতোমধ্যে এ অবৈধ ব্যবসা করে অনেকেই অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ রহমান জানান, সোনা চোরাচালানে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।