জীবননগর সীমান্ত এখন ভারতে সোনা পাচারের নিরাপদ রুট

স্টাফ রিপোর্টার: সোনা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত পয়েন্টগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার তিনটি সিন্ডিকেট সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১ বছর ধরে এলাকার ৩টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এ রুট দিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি সোনা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করছে। এসব সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেড প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে কোটি কোটি টাকার সোনা প্রতিদিন চোরাই পথে ভারতে পাচার করছে। প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে ভারতে সোনা পাচার অব্যাহত রাখলেও সোনা পাচার বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রশাসনের দুর্বল অভিযানের কারণে মাঝে মধ্যে দু-একজন বহনকারী ধরা পড়লেও মূলহোতারা বরাবরই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সোনা চোরাচালানের সাথে সরাসরি জড়িত গডফাদারদের শনাক্ত করতে পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে। গ্রেফতার হচ্ছে শুধু সোনা বহনকারীরা। অভিযোগপত্রে থাকে শুধু বহনকারীদের নাম। এভাবেই মূল সোনা চোরাচালানকারীরা (গডফাদার) আড়ালে থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে সোনা চোরাচালান। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে সোনা চোরাচালানের কমিশনের টাকার একটি বড় অংশ যায় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে গোয়েন্দা সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এ সোনা চোরাচালান। এ চক্রের মূল হোতারা ধরা না পড়ায় সোনা পাচারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জীবননগরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ গত ১০ মার্চ ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জেআর পরিবহন বাস কোটচাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে তল্লাশি করে জসিম উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে ৮৪ ভরি সোনাসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার জসিম উদ্দীন পুলিশের কাছে জানায়, সে সোনাগুলো ঢাকা থেকে জীবননগর রুট দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছিলো। এর আগে গত ৪ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জেআর পরিবহনের একটি বাস কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ তল্লাশি করে জীবননগরের উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধাপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ওবায়দুল্লা ও সুনীল কর্মকারকে ১ কেজি ১৫০ গ্রাম সোনার বার ও চেনসহ তাদেরকে আটক করে। তার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার উথলী গ্রামের সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্য এনামুল, সেকেন্দার ও আজিবর ৩০টি সোনারবারসহ ঢাকা গাবতলীতে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়। তার আগে জীবননগর সীমান্তের বিপরীতে ভারতের মাঝদিয়ায় বিএসএফ’র হাতে ৩ কেজি সোনাসহ উপজেলার হরিরহনগর গ্রামের আব্দুল্লা আটক হয়।

বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, দুবাই, সৌদিআরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা সোনার বার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকজন কমিশনের বিনিময়ে বিমানবন্দর পার করে দেয়। এরপর দশ তোলা ওজনের প্রতিটি সোনার বারের জন্য দু হাজার টাকা কমিশন নিয়ে উপজেলার সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনযোগে জীবননগরে নিয়ে যায়। পরে সময় সুযোগ বুঝে সোনা চোরাকারবারীরা চোরাচালানের মাধ্যমে সোনার বারগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়। সমস্ত এ প্রক্রিয়াটি মোবাইলফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। অভিযোগ রয়েছে, জীবননগর উপজেলার কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের সদস্যরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ওইসব অবৈধ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।