জীবননগরের বেকার যুবক বাবুর পেয়ারাচাষে স্বপ্ন পূরণ

 

 

৩ বছরে কোটি টাকার মালিক

সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরে পেয়ারা চাষে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে পুরোপুরি সাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার পেয়ারাতলা গ্রামের বেকার যুবক বাবু। প্রবল মনোবল ও কঠোর পরিশ্রম বাবুকে সফলতা এনে দিয়েছে। পেয়ারা উৎপাদন ভালো হওয়ায় তার দেখাদেখি ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এ এলাকার কৃষকরা এখন পেয়ারা চাষে ঝুঁকছেন। পেয়ারা চাষ করে শুধু বাবু নিজের ভাগ্যই বদলায়নি, সেইসাথে তিনি কৃষকদের চাষাবাদ সম্পর্কে চিরায়ত চিন্তাধারাও বদলে দিয়েছেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আজ তিনি স্থাপন করতে পেরেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

বাবু জানায়, নিজের ৩ বিঘা জমিতে ধানসহ অন্যান্য চাষ করে যা আয় হতো তা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে তার সংসার চলতো। জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য তিনি ৩ বছর আগে পেয়ারা চাষের পরিকল্পনা করেন। নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি এলাকার কৃষকদের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়ে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ির পাশের একটি মাঠে প্রথমে ১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তাতে চায়না-৩ জাতের পেয়ারাবাগান শুরু করেন। ওই বছর সমস্ত খচর বাদে তার লাভ হয় ৫ লাখ টাকা। পরের বছর তিনি ১৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেন। গত মরসুমেও তিনি ৬০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি নিজের ৩ বিঘা এবং পার্শ্ববর্তী অন্যের ৩৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মোট ৩৮ বিঘা জমিতে পেয়ারাবাগান করেছেন।

পেয়ারাচাষি বাবু জানান, ভালোভাবে জমিকর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে পেয়ারাচাষের উপযোগী করে তোলা হয় এবং নাটোর থেকে পেয়ারার চারা এনে প্রতি বিঘায় ১৭০টি করে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ২ মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ৪ মাসের মধ্যেই পেয়ারা পূর্ণ পরিপক্ক হয়ে ওঠে। বছরে ৩ দফায় প্রতিটি পেয়ারা গাছে ৬০ কেজি পর্যন্ত পেয়ারা পাওয়া যায় এবং প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকারি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। জমি তৈরি থেকে পেয়ারা সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমিতে ১২ লাখ থেকে ১৩ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়ে থাকে। যা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে লাভ হয় ১১ লাখ থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা।

চলতি বছরে ইতোমধ্যেই তিনি ৪৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন এবং আরো ৭০ থেতে ৮০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে এ বছরও তার লাভ হবে প্রায় কোটি টাকা। তিনি ইতোমধ্যেই পেয়ারা চাষের অর্জিত আয় থেকে পাকা বাড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়সহ এখন আত্মনির্ভরশীল। তিনি জানান, জীবননগরের উৎপাদিত ফরমালিনমুক্ত পেয়ারা ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।