জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় মাদকব্যবসায়ীরা বেপোরায়া

 

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় মাদকব্যবসায়ীরা বেপোরায়া হয়ে উঠেছে। পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মাদকব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ছে। গত রোববার সন্ধ্যায় শাহাপুর ক্যাম্পের টুআইসি এএসআই মহামুদ রশিদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ আন্দুলবাড়িয়া দোসীমানাপাড়ার আলোচিত মাদকব্যবসায়ী ফয়জুল ইসলাম ও হারদা আর্দশপাড়ার বুদির বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে দু নারী মাদকব্যবসায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থা করার অভিযোগ তোলে। মাদকব্যবসায়ীরা পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে বিব্রতবোধ করছে। আন্দুলবাড়িয়া এলাকায় মাদক স্পটগুলোতে গাজাঁ, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও চোলাই মদের রমরমা ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি দৈনিক মাথাভাঙ্গায় এ সংবাদ প্রকাশিত হলে গত রোববার পুলিশ মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরু করে।

এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, আন্দুলবাড়িয়া দোসীমানা পাড়ার মৃত মল্লিক মণ্ডলের ছেলে ফয়জুল হোসেন ও তার স্ত্রী শাবানা খাতুন বাড়িতে চোলাই মদ ও তালের তাড়ি তৈরির মিনি কারখানা গড়ে তুলেছে। এসব মাদক প্রস্তুত করার পর বিশেষ কায়দায় পলিথিন প্যাকেটে ভরে প্রতিদিন প্রায় ৫শ প্যাকেট মাদকসেবীদের মাঝে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতি প্যাকেটের মূল্য ৫০ টাকা। এছাড়াও তার বাড়ির আস্তানায় রয়েছে রমরমা মাদক আড্ডা। মিস্ত্রিপাড়ার দোসীমানা পাড়ার সিদ্দিকের স্ত্রী শিউলী খাতুন ৫০ টাকা মূল্যে হেরোইন পুরিয়া ও ১৮০ টাকার বিনিময় ইয়াবা ট্যাবলেট মাদকাসক্তদের কাছে সরবরাহ করছে। কুলতলার হঠাতপাড়ার জরিপ হোসেনের চোলাই মদের প্যাকেট ৫০ টাকা ও হারদা আদর্শপাড়ার বুদির বাড়ি চলছে রমরমা গাঁজা বিক্রি। আন্দুলবাড়িয়া-চাঁনপুর সড়কে খালের ধারে বাঁশবাগানে বাতেন ফকির বিক্রি করছে গাঁজা। দেহাটি বেনাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে সন্ধ্যার পর চলে রমরমা মাদক আড্ডা, কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে চলে সন্ধ্যার পর মাদক বিক্রি, কর্চ্চাডাঙ্গায় আখের আলীর বাড়িতে চলছে চুল্লু ও গাঁজার আসর, আনছারবাড়িয়া স্টেশনপাড়ার চেরাগতলা কুঁড়েঘরে সিদ্দিকের আস্তানায় চলে গাঁজা সেবন। জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে এসব মাদকব্যবসায়ীদের বাড়ির আস্তানায় প্রতিদিন চলছে রমরমা মাদক আড্ডা। মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবসমাজ। এসব মাদক আস্তানায় চিহিৃত মাদকসেবীদের তুলনায় অপরিচিত ও বহিরাগত লোকজনের উপস্থিতি দেখা গেছে। অপরাধী চক্র এসব মাদক আস্তানা থেকে মাদকসেবন করে এলাকায় নানা অপরাধ সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।

সূত্র জানায়, অপরাধীচক্রের আর একটি ডোরা হচ্ছে কর্চ্চাডাঙ্গা শ্মশান। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকার দাগি অপরাধীরা একত্রিত হয় নির্জন শ্মশানে। এ আসরে চলে মাদক সেবন। পুলিশ এ অভিযোগ পেয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় মাদকব্যবসায়ী ফয়জুল ও বুদির বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকব্যবসায়ী ফয়জুল ও বুদির স্বামী পালিয়ে যায়। এ সময় নারী মাদকব্যবসায়ীরা নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা চালায়।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানান, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কয়েকজন চিহিৃত মাদকব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এরা জেল থেকে কয়েক দিনের মধ্যে বের হয়ে এসে ফের জমজমাট ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকব্যবসা। শাহাপুর ক্যাম্পের টুআইসি এএসআই মহামুদ রশিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে হেনস্থা হতে হচ্ছে। গত রোববার সন্ধ্যায় দোসীমানাপাড়ার ফয়জুল ইসলামের বাড়িতে অভিযানকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকব্যবসায়ী ফয়জুল পালিয়ে যায়। তার স্ত্রী শাবান খাতুন ও হারদাপাড়ার মাদকব্যবসায়ী বুদি পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থা করার অভিযোগ তোলে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনৈতিক অভিযোগ করলে কি করে মাদকব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব? এ ব্যাপারে জীবননগর থানার নবাগত অফিসার ইনর্চাজ মোল্লা জাকির হোসেনের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে ওসি (তদন্ত) গোলাম মোহাম্মদ ফোন রিসিভ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, মাদকব্যবসায়ীদের সাথে কোনো আপস নেই। সে যেই হোক, যে দলেরই হোক, যতো শক্তিশালী হোক, তার মাদক আস্তানা ভেঙে দেয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে বলে তিনি জানান।