জমে উঠেছে ঈদবাজার : বেশি বিক্রি ভারতীয় পোশাক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ঈদের বাজার জমে উঠছে। দোকানগুলোতে ক্রেতা-সাধারণের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। বেচা-বিক্রিতে ব্যবসায়ীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে বরাবরের মতো এ বছরও চুয়াডাঙ্গার মার্কেটে ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি। নানা রকম ডিজাইন আর হিন্দি সিনেমার নাম অনুসারে বেশ জনপ্রিয় ভারতীয় পোশাকগুলো। ভালো নকশা না থাকার কারণে দেশি পোশাকের চাহিদা খুবই কম। তবে পোশাকের ভিন্নতার সাথে এবারে ঈদ বাজারে পোশাকের দামও অনেক চড়া। তাতে কী! ঈদ বলে কথা। বিপণী বিতানগুলো ঘুরে যাচাই বাছাই শেষে নিজেদের পছন্দের পোশাকটি বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা। নিউমার্কেট, পুরাতনগলি, প্রিন্সপ্লাজা, মুনসুপার মার্কেট, রেলবাজার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে নানা নাম ও বাহারি রঙের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্য বছরের মতো এ বছরও ভারতীয় পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে ভিড় করছে নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী ক্রেতারা। ফলে এখনই দম ফেলার ফুসরত নেই এখানকার ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিস দেড় হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের কালার ফুল শার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট, জিন্স ও গ্যাবাডিং প্যান্টের পাশাপাশি বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দের তালিকায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পোশাকের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে জানান, দেশীয় পোশাকের চেয়ে ভারতীয় পোশাক বেশি পছন্দ করছেন মেয়ে ক্রেতারা।

কলেজপড়ুয়া আরিফা খাতুন বলেন, ঈদের পোশাকে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। তাতে দামের চেয়েও আকৃষ্ট করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। প্রতিযোগিতার এ স্থানে দেশীয় পোশাক স্থান পাচ্ছে কম। সুলতানা খাতুন বলেন, ভারতীয় থ্রি-পিসের ডিজাইন ও রং ভালো লাগছে। মধ্যবিত্তদের জন্য দামও আওতার মধ্যে রয়েছে। এবার অনেকটা আগেভাগেই মার্কেটে আসতে শুরু করেন ক্রেতারা। বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ব্যবসা ভালো হবে বলে মনে করেন তারা। কিন্তু শুরুতেই ঈদের বাজার অনেকটা চড়া। ঢাকার মোকামে দাম বৃদ্ধি তাই আমাদেরও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। তবে শত অভিযোগের পাশ কাটিয়ে বিপণী বিতানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ঈদ কেনাকাটার। দোকানগুলোতে বরাবরের মতো এবারো শিশু ও মেয়েদের পোশাকে ভারতীয় ছাপ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এগুলোর চাহিদাও অনেক। ফলে ক্রেতার তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। গতবারের তুলনায় এবার ক্রেতাদের মাঝে এসেছে কিছু ভিন্নতা ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের চেয়ে হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার বিভিন্ন নায়িকাদের নামানুসারে থ্রিপিস এর চাহিদাও ব্যাপক বলে জানান বিক্রেতারা। এবার নতুন আইটেম যোগ হয়েছে বাজরাঙ্গি ভাইজান, বাহুবল, দিলওয়ালে, বাজিরাও মাস্তানি, সুলতানীয়া, ফ্লোরটার্চ, মাসাক্কালি, আশিকী, আনারকলি ও লং কামিজ। এছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তিরও চাহিদা রয়েছে। এদিকে পোশাকের ভিন্নতার সাথে এবারে ঈদ বাজারে পোশাকের দামও অনেক চড়া। তরুণীদের এসব পোশাক দেড় হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এবারে ঈদ বাজারে ছোটদের পোশাকেও রয়েছে ভিন্নতা। শিশুদের পোশাকের মধ্যে পাখি, নীলপরি, জয়া, রামলীলা, লেটপার্টি, রোহী ইত্যাদি নানা নামের বাহারি রঙ-বেরঙের পোশাক। এছাড়া ভারতীয় সিরিয়ালের নামে কিরণমালা, ইস্কেলিলা, বিন্দান, কটকটি, বজ্রমালা, হদিসমালা, ফ্লোরটার্চ, জলপরি, ইচ্ছেনদী, পারি, ঝিলিক, রাজকন্যা, লাবণ্য, ঝিলমিল, পাটিয়ালি, শঙ্কমালা, নন্দিনী, আখিঁ, পাখি, জলনুপুর উল্লেযোগ্য।

এছাড়াও ভারতীয় ডিজাইনের কাপড় ও শাড়ির সংগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। ভারতের কাশ্মীরি ডিজাইন, সিকোয়েন্সের কাজ, জরি-সুতোর বাহারি নকশার শাড়ি, পাকিস্তানি ঝলমলে কাপড়ে বাহারি সুতোর কাজ করা কাপড়, উজ্জ্বল রঙের জর্জেট, টিস্যু প্রভৃতি কাপড়ে জরি, চুমকি, সুতি কাপড়ে দেশীয় আল্পনার সুতো, এপিক ও স্ক্রিন-ব্লুক-বাটিকের পোশাক সম্ভার দারুণ আকর্ষণ করেছে ক্রেতাদের। আর পুরুষের ক্ষেত্রে দেশি ব্রান্ডের মধ্যে ফেইথ-১১, ক্যাটস আই, মনসুনরেইন, নেক্সট, শীতল, পাস পয়েন্ট, রঙ, রেক্স, সপুরা সিল্ক, হ্যান্ডিবাজার, প্রভৃতির সাথে ভারত-পাকিস্তানের নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি, চীন-থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্টের সমাহার উল্লেখ করার মতো।

তবে কেনাকাটায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ফুটপাতগুলো। ফুটপাতগুলোতে বেচাকেনা চলছে ধুমছে। ক্রেতারা বলছেন, ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্নধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের জিনিসপত্র বেশি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো শার্ট, প্যান্ট, ছোটদের সব ধরনের পোশাক, সালোয়ার কামিজ, থ্রি-পিসও পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে।