চুয়াডাঙ্গা সদরের ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে তিনমাস ধরে ইন্টারনেট নেই

 

ব্রডব্যান্ডের তার আছে সংযোগ নেই : মুখ থুবড়ে পড়েছে ডিজিটাল সেবা

নজরুল ইসলাম: গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার ধরন পাল্টে দেয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে তথ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, হাট-বাজার, আইনি পরামর্শ থেকে শুরু করে বিদ্যুত বিল প্রদানসহ সব সমস্যার সমাধান স্থলে পরিণত হবে ইউনিয়নগুলো। সাধারণ মানুষদের মধ্যে নিরন্তন তথ্য প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে উদ্যোক্তা। সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সোনালী দিগন্তের দিকে নিয়ে যেতে বিশ্বের সব কিছুর সাথে গ্রামের মানুষের তৈরি হবে সেতু বন্ধন। শহর আর গ্রামের মধ্যে থাকবে না ভেদাভেদ। ঘরে বসেই দৌঁড়গোড়ায় পৌছে যাবে ইন্টারনেট সেবা। স্বল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প সময়ে দ্রুত সেবা পেতে তথ্য সেবা কেন্দ্রের সাথে মাটির নিচ দিয়ে তারের মাধ্যমে সংযোগ দেয়া হয় উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড লাইন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা সদরের ৭টি ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড তার থাকলেও নেই সংযোগ। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে ডিজিটাল সেবা। সংশ্লিষ্ট কারো কাছে নেই কোনো উত্তর।

দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে রয়েছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ মানুষের ডিজিটাল সেবা দেয়ার জন্য তথ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে দুজন উদ্যোক্তা। তার মধ্যে একজন নারী একজন পুরুষ। এসব সেবা কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ মানুষ ৪৫ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। যার মধ্যে রয়েছে ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও কনফারেন্স, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, জেএসসি স্টুডেন্টদের ডাটাবেজ তৈরি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, সরকারি ফরম ডাউনলোড, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন, জমির পর্চার আবেদন, চারিত্রিক ও ওয়ারিশ সনদপত্রের আবেদন, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমা, চাকরির আবেদন, স্থানীয় জেলেদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিচয়পত্র, বিদেশ গমনেচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশন, ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড ডাটাবেজ এবং প্রিন্টিং, স্ক্যানিং ও ফটোকপিসহ প্রযুক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা। সেবাদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করবে এ সেন্টার। ইউনিয়ন পরিষদের এসব সেবা আরও গতিময় করতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে মাটির নিচ দিয়ে বছরখানেক আগে চায়না ফাইবার হোম কোম্পানি অপটিকাল ফাইবারের মাধ্যমে তারের সংযোগ দেন। কোম্পানির সাথে বিটিসিএলর যুক্তি থাকে এক বছর সব ধরনের পরিসেবা দেবে এ কোম্পানি। যাতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ যাতে করে শহরে না গিয়ে সময়, শ্রম ও যাতায়াত ভাড়া বাঁচিয়ে খুব সহজেই তারা এ ডিজিটাল সেন্টার থেকে যার যার প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপনের পর জীবন নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকেন গ্রামের মানুষগুলো। এখন ডিজিটাল সেন্টারে ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী অল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে নিয়মিত সেবা পাবে। এখন তাদের আর শহরে ছুটে যেতে হয় না। ভোগান্তি কম্বে এবং সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। তাছাড়া ইন্টারনেট সুবিধাদির ব্যবহার ও খুব সহজেই দেশ-বিদেশে যোগাযোগের কারণে ইউনিয়নের জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট উন্নত হবে। গত তিন মাস ধরে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ব্রডব্যান্ডের তার থাকলেও সংযোগ রয়েছে অকেজো। ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে এ সংযোগ দেয়া হয়ে ছিলো তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তথ্য সেবা কেন্দ্রর সকল সেবা বেশ কিছু দিন থেকে মন্থর হয়ে পড়েছে। যার কারণে চরম ভোগান্তি পোয়াচ্ছে উদ্যোক্তসহ সেবা নিতে আসা মানুষগুলো।

উল্লেখ্য, সাধারণ মানুষদের মধ্যে নিরন্তন তথ্যপ্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সোনালী দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রামে বসবাসকারী সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যসেবা দিতে সরকার ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর লোকাল গভর্নমেন্টের (এনআইএলজি) সমন্বয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তায় ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখন এসব ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন দেয়া হয়েছে। সরকারি অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বিটিসিএল। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র রয়েছে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃনাল কান্তি দে বলেন, তথ্যসেবা কেন্দ্রর সমস্যার বিষয়টি যথাযথ কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। অতি শিগরিগই সমস্যর সমাধন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (কুষ্টিয়া) সামসুল হক বলেন, এটা মেরামত করার দায়িত্ব আমার না। আমি শুধু সমস্যার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি। সেই সাথে ওই কোম্পানিকে জানালে তারা মেরামতের ব্যাপারে এখন না তখন করে টালবাহানা শুরু করে দিয়েছে। উদ্যোক্তা আসাদুল বিশ্বাস, রিজভী আহম্মেদ, শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রডব্যান্ডের সংযোগ না থাকায় নিজ উদ্যোগে কোনো রকমে কাজ চলছে। অথচ ওই সমস্ত মেশিনগুলো চালাতে যে বিদ্যুত বিল উঠেই যাচ্ছে।