চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসকের আহ্বান- সড়ক সম্প্রসারণের প্রয়োজনে গাছ কাটা পড়লে চারগুণ লাগাতে হবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে বেশ কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে বলে জেনেছি। আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করেছি, গাছগুলোকে বাঁচিয়ে বা গাছগুলোকে মাঝখানে রেখে সড়ক উন্নয়ন সম্ভব হলে করতে। যদি তা না হয়, তাহলে উন্নয়নের প্রয়োজনে গাছ কাটতে হবে। তবে গাছ কাটার পর অন্তত দুই থেকে চারগুণ গাছ লাগাতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ এ আহ্বান জানান। গতকাল রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গাকে প্রকৃত অর্থে শতভাগ স্যানিটেশনের আওতায় আনতে নতুন করে সার্ভে করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় নিরাপদ পানির জন্য অন্তত একটি পুকুর খনন করে পানির রিজার্ভার গড়ে তুলতে হবে। ঈদের আগে সড়ক-পথগুলোকে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। ঝিনাইদহ থেকে মুজিবনগর অভিমুখী সড়কের চুয়াডাঙ্গা অংশে সড়ক সম্প্রসারণে গাছ কেটে ফেলার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাছগুলোকে মাঝখানে রেখে সড়ক সম্প্রসারণের বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। তা সম্ভব না হলে উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটতে হবে। কিন্ত দ্রুত সড়ক নির্মাণ শেষ হলে দুই থেকে চারগুণ গাছ লাগাতে হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বজ্রপাত কবলিত এলাকা হিসেবে দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ জেলায় ৫ থেকে ১০ হাজার তালগাছের চারা লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে জেলাজুড়ে একসাথে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও বিষমুক্ত সবজি ও ফল উৎপাদনে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। আমে জন্মগতভাবে যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক কম ফরমালিনের উপস্থিতি আছে তা মানুষকে জানাতে হবে। জেলার উন্নয়ন সূচক জেলাবাসীকে জানাতে সকল দফতরকে কাজ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিল চালু করতে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতার কারণ বাল্যবিয়ে। এই বাল্যাবিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। পানিতে ডুবে মরার হাত থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করতে জেলা শহরে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিশুদেরকে ভর্তি করিয়ে সাঁতার শেখাতে হবে। বিনামূল্যে ৪০ শতক জমি পেলে সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক মানের একটি করে মসজিদ তৈরি করে দেয়া যাবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ দিনরাত কাজ করে চলেছে। ঈদ সামনে মার্কেটে প্রহরা ও আশপাশে টহল জোরদার করা হয়েছে। রেলস্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো যাত্রী যদি রাতে বাড়ি যেতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতে যেসব কর্মকর্তা বা ব্যক্তি গ্রামে বাড়িতে যাবেন , তাদেরকে ছুটির সময়ে বাড়ি বা অফিস সমুহে অবস্থানকারী ব্যক্তির নাম পরিচয় থানায় জানাতে অনুরোধ করা হয়। অহেতুক গুজব সৃষ্টি করে পুলিশকে হয়রানি না করতে তিনি আহ্বান জানান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাবির্ক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দে, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা এবং সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আঞ্জুমান আরা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ও জীবননগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল।

সভায় সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন দফতরের উন্নয়ন কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধান ও প্রতিনিধিরা এসব তুলে ধরলে জেলা প্রশাসক চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম মানসম্মতভাবে হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। যেসব এলাকায় স্পেশাল বরাদ্দের কাজ চলছে সেখানে তদারকির আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া, সদর হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।