চুয়াডাঙ্গায় হোটেলেও অজ্ঞানপার্টির কালোহাত : খেঁচুড়িতে বিপত্তি রুটিতে রক্ষা

 

স্টাফ রিপোর্টার: অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে তিন গরু ব্যবসায়ীর কাছে থাকা নগদ প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের টাইলস দেয়া চকচকে একটি হোটেলে খেঁচুড়ি খাওয়ার পর দুজন ঢুলতে শুরু করে। ভাগ্যিস তাদের অপর সঙ্গী খেঁচুড়ির বদলে রুটি খেয়ে সুস্থ ছিলেন। তিনিই তার অসুস্থ হয়ে পড়া দু সহযোগির টাকা রক্ষা করার পাশাপাশি দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়া তিনজন গতপরশু রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেলে অবস্থানকারী মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি গায়ে পড়ে খাতির জমিয়ে নিজেকে গরু ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। সকালে ভালো হোটেলে নাস্তা সেরে জীবননগরের শেয়ালমারি পশুহাটে গিয়ে গরু কেনার তাগিদ দেয়। মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তি অবশ্য খেঁচুড়ির অর্ডার দিয়ে যখন দেখে একজন রুটি নিচ্ছে তখনই ধরাপড়ার শঙ্কায় বাথরুমের কথা বলে সটকায়। ওই ব্যক্তির সাথে হোটেল বয়ের যোগসাযোসের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠলেও বহিরাগত তিন গরুব্যবসায়ী খাবার হোটেলের নাম ধাম বলতে পারেননি। শুধু বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের চকচকে টাইলস দেয়া হোটেল। তবে পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিলে ওই হোটেল যেমন চিহ্নিত হবে, তেমনই ধরাপড়তে পারে অজ্ঞানপার্টির সাথে হাত মেলানো হোটেল বয়ও।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর শোভনতলীর সুমের জালাল ওরফে জালাল ব্যপারী (৫৫), তার ব্যবসায়ী পার্টনার একই এলাকার তুমরিয়ার দেলবার হোসেন (৬০) ও সিরাজগঞ্জের চৌহলী খাসকওলিয়ার মৃত হামেদ আলীর ছেলে মফিজ ওরফে মফি ব্যপারী (৫০) গরু কেনার জন্য পরশু চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছান। আলমডাঙ্গা পশু হাটে গরু দেখে তেমন পরতা করতে না পেরে পরশু রাতে জেলা শহরের একটি আবাসিকে রাতযাপন করেন। ওই রাতেই মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি নিজেকে গরুর ব্যপারী বলে পরিচয় দিয়ে ওই তিন জনের সাথে খাতির জমাতে থাকেন। রাতেই বলে রাখেন, সকালে হোটেলে নাস্তা খেয়ে শেয়ালমারি পশুহাটের উদ্দেশে রওনা হতে হবে। একসাথেই হোটেল থেকে বের হবেন বলেও জানান। রাতের কথা মতো সকালে আবাসিক হোটেল থেকে বের হয়ে খাওয়ার হোটেলে যান। রাতে উজিয়ে খাতের জমানো ওই ব্যক্তি হোটেলের খেঁচুড়ির প্রশংসা করে সকলের জন্যই খেঁচুড়ির অর্ডার দেন।  বেকে বসেন দেলবার হোসেন। তিনি খেঁচুড়ির বদলে রুটি শব্জির অর্ডার দেন। খওয়া শুরু করতে না করতে বাথরুমের কথা বলে সটকে পড়েন। এদিকে জালাল ও মফিজ খেঁচুড়ি খেয়ে হোটেল থেকে বের হতে না হতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দেলবার নগদ টাকাগুলো নিজের মতো নিরাপদে নিয়ে অসুস্থ দুজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুজন হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বেপরওয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ট্রেন ও বাসে তো অজ্ঞানপার্টির উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ভ্রমণকারীরা। গত এক সপ্তাহে ট্রেন থেকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে অজ্ঞান অবস্থায় নামিয়ে দেয়া যাত্রীর সংখ্যা ৫ ছড়িয়ে গেছে। এরপর এবার শুরু হয়েছে হোটেলে হোটেল বয়কে কাজে লাগিয়ে অজ্ঞান করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা। জালাল ও মফির মতো দেলবারও খেঁচুড়ি খেলে ওদের গরু কেনার ওতোগুলো নির্ঘাত হারাতে হতো।