চুয়াডাঙ্গাসহ জেলা প্রশাসক ৯ নারী

 

স্টাফ রিপোর্টর: বাংলাদেশের নারীরা বিমান চালাচ্ছেন? যোগ দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীতেও? এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কায়িক পরিশ্রমের পেশায়ও আসছেন? পেশাদার নারী বাসচালক বা ট্রেনচালকও এখন পুরোনো গল্প? এমনকি অটোরিকশা আর রিকশা চালাতেও পিছিয়ে নেই নারী? শুধু পেশাগত কাজেই যুক্ত হচ্ছেন না, তারা রাজনীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন হচ্ছেন।

দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। সঙ্গে দেশের প্রশাসনে নারীর অগ্রগতি নারী ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গত ২৩ আগস্ট জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চার নারী। এই নিয়ে দেশে এখন নারী জেলা প্রশাসকের সংখ্যা নয়জনে দাঁড়িয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের নয় জেলার দায়িত্বে নারী। এটা অবশ্যই নারীর  ক্ষমতায়নের দিক থেকে গর্বের বিষয়। এটা বাংলাদেশের নারীর অগ্রগতির একটা ইতিবাচক দিক। তবে নারীরা এখনো ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সাম্য ও সমঅধিকারের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। উত্তরাধিকারেও সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রশাসনে নারী অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু এই সংখ্যাটা আরো বাড়তে হবে।

জানা যায়, দেশের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রাজিয়া বেগম। পরে বিভিন্ন সময়ে অনেক জেলায় নারী জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২৩ আগস্ট ফরিদপুরে বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া, সিরাজগঞ্জে কামরুন নাহার সিদ্দীকা, মুন্সিগঞ্জে বেগম সায়লা ফারজানা এবং নাটোরে বেগম শাহিনা খাতুনকে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আগে থেকেই আরো পাঁচজন নারী জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন। এরা হলেন- মানিকগঞ্জে রাশিদা ফেরদৌস, হবিগঞ্জে সাবিনা আলম, পাবনায় রেখা রানি বালো, চুয়াডাঙ্গায় সায়মা ইউনুস এবং রাজবাড়ীতে জিনাত আরা।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম বলেন, কেবল এই পদ বলে কথা না। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রেই এখন আগের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি আসছে নারীরা। তারা ভালোও করছে। আশা করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে। মেয়েরা আমাদের দেখে উত্সাহিত হয়।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক জিনাত আরা বলেন, নারীরা একটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন। এটা অবশ্যই সম্মানের বিষয়। নারীর ক্ষমতায়নেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করি।

পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই এটা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে। নারীদেরকে আটকে রাখা যায়নি। বিরুদ্ধ পরিবেশেও তারা সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছেন। এখন সবাই বুঝতে পারছে নারীদেরকে বাদ রেখে উন্নয়নের সোপানে পৌঁছানো সম্ভব না। নারী-পুরুষ উভয়কেই এগিয়ে যেতে হবে।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বলেন, একজন নারী যখন অফিস করেন তখন তিনি কিন্তু কাজের মধ্যেই ঢুকে থাকেন। তারা বাইরের আলাপের চেয়ে অফিসের কাজই বেশি করেন।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বলেন, কেবল জেলা প্রশাসক কেন, ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে নারী তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন হতে পারেন। এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

ফরিদপুরে নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, আমি মেয়েদের স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমি যখন ফরিদপুরের রাস্তা দিয়ে হাঁটবো তখন নারীরা আমাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাবে। তারাও স্বপ্ন বুনবে।

মুন্সিগঞ্জে নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াকে অবশ্যই গর্বের মনে করি। আরো নারী আসা উচিত এই পদে। এদের যোগ্যতা আছে। সেটা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জে নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৩০ শতাংশ নারী জেলা প্রশাসক দেয়ার কথা বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। সেই হিসাবে নারী জেলা প্রশাসকের সংখ্যা তো আরো বেশি হওয়া উচিত।

নাটোরে নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, আমি যখন জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করবো তখন কেবল নারী নয়, সবার সুবিধাই দেখার চেষ্টা করবো। নির্যাতিত নারী যেন ন্যায়বিচার পায়, প্রতিবন্ধী যেন সহযোগিতা পায় সেই দিকে দৃষ্টি থাকবে।