চুয়াডাঙ্গার সুজায়েতপুর-গহেরপুর মাঠের সমতল জমিতে ড্রেজার লাগিয়ে রমরমা বাণিজ্য : বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলন : হুমকিরমুখে আবাদী জমি ও পাকা সড়ক

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের সুজায়েতপুর গহেরপুর মাঠের ফসলি জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু। ৩০-৪০ ফুট গফির করে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে পার্শবর্তী আবাদী ফসলি জমি। পাশাপাশি ঘন ঘন বালু বোঝাই ট্রাকর চালিত ট্রলি যাতায়াতে পাকাসড়ক হচ্ছে ক্ষতিগস্ত।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ধুতরহাট গ্রামের জনৈক কলম আলী বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তলন করে থাকেন। তারি ধারাবাহিকতায় গড়াইটুপি ইউনিয়নের সুজায়েতপুর মাঠে গহেরপুর গ্রামের পিজর উদ্দীনের ছেলে দীন মোহাম্মদ এবং হায়দার আলীর ছেলে আশরাফুল আলম ফসলি জমি পুকুর খননের নাম করে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য জমি লিজ দিয়েছেন কলম আলীর নিকট। কলম আলী ড্রেজার মেশিন ভিড়িয়ে লিজ নেয়া জমি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তলন করছেন। জমিগুলো ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর করে খণন করেছেন বলে অভিযোগ কারীরা জানান। বালু তুলে পার্শ্বর্তী সমতল জমিতে শ’ শ’ গাড়ি বালু রাখায় দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ছোট একটি টিলা। পুকুরগুলোর গভীরতা বেশি মাত্রায় হওয়ায় আশপাশ এলাকার আবাদী ফসলি জমিগুলোতে ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে। কারণ ফসলের জমিতে পানি দিয়ে সেচ দিলে সেই পানি দ্রুত পুকুরে নেমে আসে। বিষয়টি তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনর নিকট ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানালে তিনি বিষয়টি তাৎখণিক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান এবং বালু না তোলার জন্য পুকুর মালিকদের নিষেধ করেন। তাতে কর্ণপাত করেন না কলম আলীসহ পুকুর মালিকরা।

জমির মালিক দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমি না বুঝে কলম আলীকে পুকুর খণন করতে দিয়েছি। সে যে বাণিজ্যিকভাবে বালু তুলবে সেটা আমার জানা ছিলো না। আর বালুতোলা অপরাধ এটাও আমি জানি না। এদিকে এক গাড়ি বালু ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছে কলম আলী। তাছাড়া বালুবাহী ট্রাক রাস্তা দিয়ে ঘন ঘন চলাচল করায় ওই কাঁচা রাস্তাটি গর্তে পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় কাঁচা মাটির এই রাস্তা ধসে যেতে পারে। এদিকে বালু ভর্তি ট্রাক বেপরোয়া চালানোর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে অনেকেই।

অভিযোগকারীরা আরও বলেন, বিষয়টি তিতুদহ ভূমি অফিসকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব থাকায় বালু উত্তলন কারা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসলে বালু তোলা বন্ধ থাকে। সুয়োগ বুঝে আবারও ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধ্যভাবে বালু তোলা শুরু হয়।

এদিকে বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ সালের ৬২ নং আইনের ১৫(১) ও (২) এই আইনের ধারা ৪ এ বর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোনো বিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে বা এই আইন বা অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করে অথবা বালু বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেখে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে  সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বছর কারাদ- বা সর্বনি¤œ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা থেকে ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দেে- দ-িত হবেন। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার হবে।

তবে অপরিকল্পিতভাবে ম্যাশিন লাগিয়ে এভাবে বালু উত্তোলন করায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সরজগঞ্জণ-আন্দুলবাড়িয়া সড়কসহ এলাকার অনেক সম্পদ। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নিলে ফসলি জমিসহ  যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃনাল কান্তি দে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে বালু উত্তলনকারী কলম আলীর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।