চুয়াডাঙ্গার মেয়ে সফল অভিনেত্রী নাজনীন হাসান চুমকী

থিয়েটার আমাকে মানুষ করেছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার ব্যাংকার দম্পতির মেয়ে নাজনীন হাসান চুমকীকে সকলে অভিনেত্রী হিসেবেই চেনেন। কিন্তু সম্প্রতি তার নামের সাথে যোগ হয়েছে নাট্যকার ও পরিচালক শব্দ দুটি। নামের পাশে নতুন দুটি বিশেষণ। ভাবতে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে চুমকী হেসে বলেন, সত্যি বলতে আমি নিজেকে অভিনেত্রী পরিচয়ে দেখতে বা শুনতে পছন্দ করি। তবে লেখালেখির বা পরিচালনার কাজ যতোটা সহজ মনে হয়, ততো সহজ নয়। চুমকীর সাথে কথা হচ্ছিলো তার উত্তরার বাসায়। তার পাশে মনোযোগ সহকারে কথা শুনছে মিউ এবং সুন্দরী। ভাবছেন এরা কারা। চুমকীর পোষা আদরের দুটি কুকুর ছানা। তাদের নিয়েই অবসর কাটে চুমকীর। অভিনয়, লেখালেখি এবং পরিচালনা।

chumki-0120130930091434

আপনাকে অভিনেত্রী হিসেবে পর্দায় দর্শকরা এখন নিয়মিত দেখছেন। কিন্তু আপনার শুরুটা তো মঞ্চ অভিনয়ের মাধ্যমে। সে বিষয়ে জানতে চাই। জবাবে চুমকী বললেন, আমার দেশের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা। সেখানে ১৯৯২ সাল থেকে অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের হয়ে মঞ্চে অভিনয় শুরু। চার বছর পর ঢাকায় এসে দেশ নাটকে কাজ শুরু করি। দেশ নাটকের হয়ে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করি।

কথা বলতে বলতেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন চুমকী। বললেন, আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু থিয়েটার আমাকে মানুষ করেছে। আমি জীবনে অনেক কিছু এখান থেকে শিখেছি। এজন্য দেশ নাটক এবং ইশরাত নিশাত আপার কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

দেশ নাটকের হয়ে চুমকী ‘লোহা’, ‘বিরষাকাব্য’, ‘নিত্যপুরাণ’সহ আরো কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে টিভিতে বেশ কিছু নাটকে চুমকীর মুখ দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি আগামী ঈদেও আসছে তার অভিনীত নাটক। টিভিতে অভিনয়ের শুরুর ব্যাপারে  চুমকী বললেন, আমার টিভিতে প্রথম অভিনীত নাটক অনন্ত হীরা পরিচালিত ‘যেতে যেতে অবশেষে’। তখন আমি দেশ নাটকে ছিলাম। এ নাটকের প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রথমে করতে চাইনি। কারণ তখন মঞ্চনাটকের বেশ জনপ্রিয়তা ছিলো। বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে শিল্পীদের কাছ থেকে দেখার আগ্রহ ও উন্মাদনা আমি দেখেছি। মঞ্চকেই আমার সবচেয়ে ভালো জায়গা মনে হত। তারপরও টিভিতে অভিনয় করলাম। নাটকটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো। এভাবেই শুরু।

এরপর ধারাবাহিক এবং খণ্ড নাটকসহ প্রায় একশ টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। জগন্নাথ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার পর একটি রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন। বর্তমানে টিভি চ্যানেলে চুমকী অভিনীত ‘যৈবতীকন্যা’, শান্তি নিলয়’, নায়িকা সংবাদ’ নাটকগুলো প্রচার হচ্ছে। এবার আসি তার নাটক লেখালেখি প্রসঙ্গে। আমাদের চারপাশের অনেক গল্প বা তার নিজের কিছু ভাবনার প্রতিফলন তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে ওঠে। এ পর্যন্ত চুমকী বেশকিছু নাটক লিখেছেন। তার লেখা প্রথম নাটক ছিলো ‘বাইনোকুলার’।

এটি রাজিবুল ইসলাম রাজিব পরিচালনা করেন। সেই নাটক লেখার গল্পটি তার মুখেই শুনি। ‘২০১১ সালের কথা। এক  নাটকের শুটিঙে আমরা সিলেট গিয়েছিলাম। সেখানে এমন জায়গায় শুটিং হয়েছিলো যেখানে কস্টিউম চেঞ্জ থেকে শুরু করে অনেক কিছুর সমস্যা ছিলো। তখন আমি ইউনিটে বলেছিলাম, এমন জায়গায় শুটিং করতে হবে কেন? আমি যদি নাটক লিখি তখন এমন লোকেশনের কথা মাথায় রেখেই লিখবো। তখন ইউনিটের সবাই বলাবলি করা শুরু করে যে, রাজিবকে আমি একটি নাটক লিখে দেবো। রাজিবও সেটা খুব সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো। আমি যে গল্পটা দেই সেটা ওরা চেঞ্জ করে ‘বাইনোকুলার’ নির্মাণ করে।

এরপর তার লেখা অনেকগুলো নাটক প্রচার হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আমি এবং শ্বেত পায়রা’, ‘নূপুর’, ‘হারানো সুর’, তবুও নীল, ‘অন্ধকারে রং খুঁজি’, ‘মাত্র একদিন’, ‘সং সাওয়ারী’সহ আরো কয়েকটি নাটক। এছাড়া সম্প্রতি তার লেখা জিটিভিতে নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘নায়িকা সংবাদ’ প্রচার শুরু হয়েছে।

chumki-0320130930091444

এমআর মিজানের গল্পে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অভিনেত্রী নাজনীন হাসান চুমকী। এ নাটকটি নিয়ে চুমকী বলেন, গল্পে মধ্যবিত্ত আবদুল কুদ্দুস মাখনের ছোট ছেলে পল্টু  একা একা বাড়ি থেকে ঢাকায় গেলেও বাড়ি ফেরে বউ নিয়ে। এ বউ সাধারণ কেউ নয়, একেবারে নায়িকা বউ। পল্টু মিয়ার নায়িকা বউ নিয়ে পুরো গ্রামে শুরু হয় মাতামাতি। নাটকটির বেশ সাড়া পাচ্ছি। নাটক লেখার পাশাপাশি গত ঈদে তার রচনা ও পরিচালনায় চ্যানেল নাইনে প্রচার হয় খণ্ডনাটক ‘একটি রাত অতঃপর নিঃশূন্যতা’। এবার কোরবানি ঈদে তার অভিনীত ‘কেরামতের কেরামতি’ নাটকটি প্রচার হবে। এটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন লিটু করিম। এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির ও ডা. এজাজ। নাটকের পাশাপাশি তিনটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন চুমকী। এগুলোর মধ্যে কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’ ছবিতে ময়না চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। অন্য দুটি ছবি হলো তানভীর মোকাম্মেলের ‘লালন’ ও কাজী মোরশেদের ‘একই বৃত্তে’। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে চুমকী বলেন, ‘আমি সবসময় ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি। আমার অভিনীত একই বৃত্তে ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তৌকির আহমেদ। এ ছবিটি নিয়েও আমি বেশ আশবাদী। আর কোলকাতার অফ ট্র্যাকের কিছু বাংলা ছবির গল্প আমার বেশ প্রিয়। এ ধরণের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই।

সবশেষে কথা হলো ব্যক্তিগত বিষয়ে। এগারো বছর হলো তার সংসার জীবন। জীবনসঙ্গী আহমেদ পাশা তুষার একটি দেশীয় কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করছেন। অভিনয় জীবন, স্বামী-সংসার এবং মিউদের নিয়ে ভালোই কাটছে চুমকীর বর্তমান সময়। ছোটবেলা থেকেই জীবনের কোনো পরিকল্পনা করে বড় হননি তিনি। তাই নিজের জীবনে যা কিছু এ পর্যন্ত পেয়েছেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট চুমকী। আর এভাবেই সামনের দিনগুলোও সবার ভালোবাসা নিয়ে কাটিয়ে দিতে চান এ সু-অভিনেত্রী।