চুয়াডাঙ্গার মসজিদপাড়ার ৪ যুবককে মারপিটের পর পুলিশে : পরে মুক্ত

চুয়াডাঙ্গা থেকে তাড়িয়ে আলমডাঙ্গার পূর্বকমলাপুর ব্রিজমোড়ে পৌঁছে বিপত্তি

 

স্টাফ রিপোর্টার: পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু ধাওয়া করে চুয়াডাঙ্গা মসজিদপাড়ার ৪ যুবক পিটুনির শিকার হয়েছে। এদেরকে আলমডাঙ্গার পূর্বকমরাপুর ব্রিজের নিকট ধরে পিটুনি শেষে পুলিশে দেয়া হয়। পরে অবশ্য থানা থেকে ৪ জনকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের পূর্বকমলাপুর ব্রিজমোড়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তাড়িয়ে ধরে আলমডাঙ্গা কুমারীর জাদুপপুর গ্রামের ৩ যুবককে মারধর করে তিন যুবক। দৃশ্য দেখে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হয়। স্থানীয় জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। চুয়াডাঙ্গার বড় মসজিদপাড়ার ৪ যুবককে ধরে পিটুনি শুরু করে। পিটুনির পর পুলিশে দেয়া হয়। মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে ৪ যুবককে ধরে পিটুনি দেয়া হয়েছে বলেও মৌখিকভাবে জানানো হয় পুলিশকে।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়নের আলহাজ রবিউলের ছেলে রনি, সোজা উদ্দিনের ছেলে কাউছার ও গোবিন্দপুরের রবিউলের ছেলে শাফি বলেছে, গতকাল শুক্রবার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষা শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে ফিরছিরাম। চুয়াডাঙ্গা একাডেমী মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকজন যুবক তাড়া করে। মোটরসাইকেল দ্রুত চালিয়ে সেখান থেকে সরতে পারলেও ওরা পিছু ছাড়ে না। দুটি মোটরসাইকলযোগে ৪ জন পিছু ধাওয়া করে। এ সময় আলমডাঙ্গার পূর্বকমলাপুর ব্রিজ মোড়ে পৌঁছুলে পেছন দিক থেকে ওরা আঘাত করে। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। মোটরসাইকেলে থাকা ৩ পরীক্ষার্থী আহত হয়। মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে পিছু নেয়া ৪ যুবক পরীক্ষার্থীদের দিকে রুখে গেলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। ৪ জন তিনজনকে মারধর করতে থাকে। ৩ পরীক্ষার্থীর আত্মচিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসে। এলাকাবাসীর দিকে ৪ যুবক রুখে গেলে জনগণ সংগঠিত হয়ে পিটুনি দিতে থাকে। মুখে মুখে রটে যায় মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী ধরে পিটুনি দেয়া হচ্ছে। এ প্রচারে উৎসুক জনতা বেড়ে যায়।

পিটুনির পর যাদেরকে পুলিশে দেয়া হয়েছে তারা হলো- চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদপাড়ার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে সাবের (২০), মৃত জাফরের ছেলে সাদ্দাম (২০), সোলাইমানের ছেলে রকিব (২০) ও নাইমের ছেলে আমির হাসান (২০)। সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ও পাঁচকমলাপুর ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪ জনকে গ্রেফতার করে আলমডাঙ্গা থানায় নেয়। মোটরসাইকেল দুটিও থানায় নেয়া হয়।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদপাড়ার সাবের, সাদ্দাম, রকিব ও আমির হাসান ভিন্নমত প্রকাশ করে বলে, গত কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়ায় থাকাকালীন ইন্টারনেটে অনলাইন ব্যবসার টাকা নিয়ে আমাদের একটি মোটরসাইকলে আটক করে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেই ওরা। চুয়াডাঙ্গায় তাদের দেখতে পেয়ে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। ওরা কৌশলে মোটরসাইকেল চালিয়ে তিনজন দ্রুত সরে পড়ে। এ কারণেই তাদের পিছু নিয়েছিলাম। পেছন থেকে লাঠি মারা হয়নি, ওরা এমনিতেই মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা মেরে পড়ে যায়। তখন স্থানীয়রা ছুটে এসে ভুল বুঝে আমাদের ওপর চড়াও হয়। জনরোষের শিকার হই আমরা।

অপরদিকে আমাদের আলমডাঙ্গা ব্যুরো পুলিশসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানিয়েছে, আলমডাঙ্গার চরযাদবপুর গ্রামের রবিউলের ছেলে মেহেদজ্জামান রনি ও একই গ্রামের সুজাউদ্দিনের ছেলে কাওছার আলী অনলাইন আউট সোসিঙের ব্যবসা করে। তাদের সাথে চুয়াডাঙ্গার ১৫ জন ছেলে যোগ দেয়। রনি ও কাউসারদের নিকট চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন যুবক অনলাইন ব্যবসার দেড় লাখ টাকা পায়। গতকাল চরযাদবপুর গ্রামের রনি ও কাউসার মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হলে পাওনাদার কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তারা দাড়াতে বললে রনি ও কাউসার মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত সরে পড়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুটি মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে সাদ্দাম (২০) ও নাইমের ছেলে আবির হাসান তাদের তাড়া করে। পাঁচকমলাপুর ব্রিজের নিকট পৌঁছুলে পালানোমুকি যুবকরা ঘুরে দাঁড়ায়। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তারা চুয়াডাঙ্গার ৪ যুবককে পিটিয়ে পুলিশে দেয়। পরে থানা থেকে ৪ জনকে মুক্ত করতে চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ তদবির শুরু করেন। এতে থানায় উত্তেজনা দানা বাধে। এক পর্যায়ে স্থানীয় রাজনৈতিক বেশ কয়েকজন নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগ ও আলমডাঙ্গা ছাত্রলীগের নেতারা বিষয়টি মীমাংসা করেন। গ্রেফতারকৃত ওই ৪ যুবককে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।