চুয়াডাঙ্গার দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্দ্বন্দে ৫ বছরেও গঠন হয়নি কমিটি : সাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত

বেগমপুর প্রতিনিধি: একে অপরের প্রতি অনাস্থা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বে ৫ বছরেও গঠিত হয়নি চুয়াডঙ্গা সদর দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। শুধু কমিটিই না একই সময় ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাস্তবায়ন করতে শিক্ষকদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। তাই জরুরি ভিত্তিতে যাতে বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন এবং প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ হয় তার প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে গ্রামবাসী।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের শিক্ষানুরাজ্ঞীরা নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৩৬ সালে ৭৫ শতাংশ জমির ওপর স্থাপন করেন দোস্ত গ্রাম নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশ স্বাধীনের পর সেটি জাতীয়করণ হয়ে দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৮১ বছর ধরে বিদ্যালয়টি নানা প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে সুনামের সাথে চলে আসছে। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকা এবং একে অপরের নেতৃত্ব না মানায় বিগত ৫ বছর ধরে গঠিত হয়নি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। অপর দিকে কমিটি না থাকার পাশাপাশি দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি ২০১২ সাল থেকেও শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলে আসছে সকল কার্যক্রম। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মোট ৪০২ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৬৭, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬৯, তৃতীয় শ্রেণিতে ১শ, চতুর্থ শ্রেণিতে ৮৭ এবং ৫ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৫২ জন। সহকারী শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। গ্রামবাসী জানান, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় বিদ্যালয় পরিচালিত হলেও বিদ্যালয় হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে গ্রামের স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে থাকে। ফলে কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত ৫ বছর ধরে এ দুটি বিষয় না থাকায় বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাস্তবায়ন করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষকদের। আবার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে স্থানীয় রাজনৈতিক চাপ পড়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাথা ব্যথা না থাকলেও শিক্ষদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দিমত করার রয়েছে অনেকেই। গ্রামবাসী আরও জানান, বিদ্যালয়টি ঘিরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিরোধীতার কারণে বিরোধীতা করে থাকেন। নেতৃবৃন্দের বোঝা উচিত শিক্ষকরা এখানে চাকরি করতে আসেন। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ভালো মন্দের দিকটি নেতৃবৃন্দকেই ভাবতে হবে। কমিটি না থাকায় অনেকের মতামতকেই মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও গুরুত্ব দিতে হয় শিক্ষকদের। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের টিফিনের জন্য কলারুটির দোকান দিয়েছেন দফতরী কাম নাইটগার্ড। যেখানে শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাবার কিনে খাবে। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দোকান হওয়ায় বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানদারদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দোকান এ ইসুকে কেন্দ্র করে অনেকেই জল ঘোলা করার চেষ্টাও করে। শেষমেষ দোকান থাকার পক্ষে মতামত দেন অনেকেই। উল্লেখ্য, পিডিপি থ্রী প্রকল্পের অর্থায়নে ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টির সীমানা পাঁচিল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু হাসান বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর অভিভাবকরা তাদের কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে এডহক কমিটি গঠন করা হবে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জায়েদা বেগম বলেন, কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।