চিত্রনায়িকা থেকে ফুটপাতে বই বিক্রেতা

 

স্টাফ রিপোর্টার: নব্বই দশকের ছবি ‘সোহরাব রুস্তম’র কথা নিশ্চয়ই মনে আছে অনেকের। সেই ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। নায়কের পাশে সার্বক্ষণিক থেকে ছবিকে রঙে-ঢঙে ফুটিয়ে তুলতে একজন নায়িকারও প্রয়োজন হয়। হ্যাঁ, সেই ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশেও একজন নায়িকা ছিলেন। নাম তার বনশ্রী। মুক্তি-পরবর্তী ছবিটি ব্যাপক ব্যবসাসফলও হয়েছিলো। ছবির নায়িকা বনশ্রীও রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন। দামি গাড়িতে ভ্রমণ, বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেই কেটেছে বনশ্রীর সেই দিনগুলো। বললে বিশ্বাস হবে! সেই তারকা নায়িকা বনশ্রী আজ ঢাকার রাজপথের ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে এবং বাসযাত্রীদের কাছে নামাজ শিক্ষার বই বিক্রি করেই দিন যাপন করছেন! একসময়ের বিতর্কিত প্রযোজক ফারুক ঠাকুর এ বনশ্রীকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘সোহরাব-রুস্তম’ ছবিটি। তখন বনশ্রী ফারুক ঠাকুরের বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন বলেও গুঞ্জন ছিলো। ফারুক ঠাকুর চেয়েছিলেন বনশ্রী হবে এদেশের প্রথম সারির একজন নায়িকা। এজন্য তিনি বনশ্রীর জন্য ছবিতে বিনিয়োগও করেছিলেন। সোহরাব-রুস্তমের পর বনশ্রী অভিনীত ‘নেশা’ ও ‘মহাভূমিকম্প’ নামের আরও দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছিলো। শুটিং শুরু হয়েছিলো ‘প্রেম বিসর্জন’, ‘নিষ্ঠুর দুনিয়া’ ও ‘ভাগ্যের পরিহাস’ ছবির। কিন্তু সেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বনশ্রী আজ তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে হকারি করে দিনযাপন করছেন। ফারুক ঠাকুর নিজ বলয়ের বাইরে কারও ছবিতে কাজ করতে দিতেন না বনশ্রীকে। এ নিয়ে বনশ্রীর মনে ক্ষোভ থাকলেও ফারুক ঠাকুরের ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলেননি। বনশ্রী থাকতেন মোহাম্মদপুরের একটি আলিশান বাড়িতে। বিলাসিতারও কোনো কমতি ছিলো না। এত সুখ হয়তো তার কপালে সয়নি। একটি দুর্ঘটনা সবকিছু বদলে দেয়। গুলশান এলাকার একটি জমি নিয়ে কিছু লোকের সাথে ফারুক ঠাকুরের বিরোধ ছিলো। একদিন প্রতিপক্ষের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ফারুক ঠাকুরের ছোড়া গুলিতে প্রতিপক্ষের এক লোক ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনার পর ফারুক ঠাকুর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি। একা হয়ে যায় বনশ্রী। এরপর থেকেই শুরু হয় বনশ্রীর জীবনযুদ্ধ। ফারুক ঠাকুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনশ্রীকে নিয়ে আর কেউ ছবি বানাতে আগ্রহী হয়নি। বনশ্রী এরপর ধানমণ্ডিতে একটি বিউটি পার্লার করেন। সে ব্যবসাও তিনি বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারেননি। আবার নতুনভাবে শুরু হয় তার জীবনযুদ্ধ। দিনে দিনে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে সেই বিবাহিত মানুষটিও গায়েব হয়ে যায় একসময়। মাত্র তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে সিনেমার মতোই আজ ফুটপাতে বই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন বনশ্রী। মাসখানেক আগে এফডিসির শিল্পী সমিতিতে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো শিল্পী তার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাননি। শিল্পী সমতিরি বর্তমান সভাপতি শাকিব খানের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার নাগাল পাওয়া বনশ্রীর পক্ষে অসম্ভব। সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগরের কাছে সাহায্য চেয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাই অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা এবং খাবার জোগানোর জন্য আজ তিনি রাস্তায় নেমেছেন। বর্তমানে শেখের টেকের একটি বস্তিতে দিন কাটছে বনশ্রীর। অনাহার আর অর্ধাহারে থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত একজনের পরামর্শে ফুটপাত এবং গাড়িতে বই বিক্রির কাজ শুরু করেছেন।